জেনে নিন তারাবির নামাজের নিয়ম এবং তারাবির নামাজের দোয়া

জেনে নিন তারাবির নামাজের নিয়ম এবং তারাবির নামাজের দোয়া



জেনে নিন তারাবির নামাজের নিয়ম এবং তারাবির নামাজের দোয়া
 জেনে নিন তারাবির নামাজের নিয়ম এবং তারাবির নামাজের দোয়া

ভূমিকা: 

রমজান মাসের সৌন্দর্য ও আধ্যাত্মিকতা অপরিসীম। এই মাসে সিয়াম সাধনার পাশাপাশি তারাবির নামাজ মুসলিম উম্মাহর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। কিন্তু অনেকেই এই নামাজের সঠিক নিয়ম, দোয়া ও তাৎপর্য সম্পর্কে পরিপূর্ণ জ্ঞান রাখেন না। এই ব্লগে আমরা কুরআন-হাদিসের আলোকে তারাবির নামাজের বিস্তারিত নিয়ম, দোয়া এবংভুলগুলি নিয়ে আলোচনা করব। পাশাপাশি, এই ইবাদতের আধ্যাত্মিক ও সামাজিক গুরুত্বও তুলে ধরব, যাতে আপনি সম্পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে রমজানের রাতগুলোকে সার্থক করতে পারেন।


তারাবির নামাজ কি? ঐতিহাসিক পটভূমি ও গুরুত্ব

তারাবির নামাজ হল রমজান মাসের সুন্নাত নামাজ, যা ইশার নামাজের পর থেকে ফজরের আগ পর্যন্ত পড়া যায়। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় রমজানে কিয়াম (তারাবি) করবে, তার আগের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে” (সহিহ বুখারি, হাদিস নং ২০০৮)।

খলিফা উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.)-এর সময়ে এই নামাজ জামাতের সাথে নিয়মিতভাবে আদায়ের রীতি চালু হয়। বর্তমানে বিশ্বজুড়ে কোটি মুসলিম ২০ রাকাত তারাবি নামাজ পড়ে থাকেন, যা সম্প্রদায়গত ঐক্য ও আধ্যাত্মিক শক্তির প্রতীক

 তারাবির নামাজের নিয়ম: ধাপে ধাপে সম্পূর্ণ গাইড

প্রস্তুতি ও শর্তাবলী

১. নিয়ত: মনে মনে নিয়ত করুন, “আমি আল্লাহর জন্য ২০ রাকাত তারাবির নামাজ পড়ছি।”

২. সময়: ইশার নামাজের পর থেকে সুবহে সাদিকের আগ পর্যন্ত।

৩. রাকাত সংখ্যা: সাধারণত ২০ রাকাত (৪ রাকাত × ৫ সেট), প্রতি ৪ রাকাতের পর বিশ্রাম নেওয়া সুন্নাত।


 নামাজের সঠিক পদ্ধতি

প্রতি ২ রাকাতের পর সালাম ফেরানো উত্তম (৪ রাকাতেও আদায় করা যায়)।

দীর্ঘ সুরা তিলাওয়াত ও রুকু-সিজদায় ধীরস্থিরতা জরুরি।

শেষ ৩ রাকাত বিতর নামাজের সাথে আদায় করা (ওইট্র নামাজ)।

 ভুলগুলি এড়িয়ে চলুন

দ্রুত পড়া বা শব্দগত ভুল করা।

জামাত ছেড়ে একা পড়া (যদি জামাত উপলব্ধ হয়)।

অতিরিক্ত ক্লান্তি এড়াতে হালকা খাবার ও পর্যাপ্ত পানি পান করুন।

তারাবি নামাজের নিয়ত

প্রত্যেক আমলের জন্য নিয়ত করতে হয়। তারাবি নামাজের জন্যও নিয়ত করা হয়। নিয়ত মনে মনে বাংলাতেও করা যায়। আমাদের দেশের প্রচলিত তারাবির আরবি নিয়তটি হলো-

نَوَيْتُ اَنْ اُصَلِّىَ للهِ تَعَالَى رَكْعَتَى صَلَوةِ التَّرَاوِيْحِ سُنَّةُ رَسُوْلِ اللهِ تَعَالَى مُتَوَجِّهًا اِلَى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِيْفَةِ اللهُ اَكْبَرْ

উচ্চারণ: নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তায়ালা, রাকাআতাই সালাতিত তারাবি সুন্নাতু রাসূলিল্লাহি তায়ালা, মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারিফাতি, আল্লাহু আকবার।

অর্থ : আমি কেবলামুখী হয়ে দুই রাকাত তারাবি সুন্নত নামাজের নিয়ত করছি; আল্লাহু আকবার।

তারাবি নামাজের নিয়ত আরবিতে করা আবশ্যক বা বাধ্যতামূলক নয়। বাংলাতেও এভাবে নিয়ত করা যাবে যে, ‘আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য তারাবি -এর দুই রাকাত নামাজ কেবলামুখী হয়ে (জামাত হলে- এ ইমামের পেছনে) পড়ছি- (اَللهُ اَكْبَر) আল্লাহু আকবার।


তারাবীহ নামাজের দোয়া

তারাবীহ নামাজে, প্রতি চার রাকাতের পর বিরতি নেওয়া হয়। আমাদের দেশে এই সময় একটি প্রার্থনা পাঠ করার রেওয়াজ রয়েছে। প্রায় সকল মসজিদের মুসল্লিরা এই দোয়াটি পাঠ করেন। প্রার্থনাটি হল:


سُبْحانَ ذِي الْمُلْكِ وَالْمَلَكُوتِ سُبْحانَ ذِي الْعِزَّةِ وَالْعَظْمَةِ وَالْهَيْبَةِ وَالْقُدْرَةِ وَالْكِبْرِيَاءِ وَالْجَبَرُوْتِ سُبْحَانَ الْمَلِكِ الْحَيِّ الَّذِيْ لَا يَنَامُ وَلَا يَمُوْتُ اَبَدًا اَبَدَ سُبُّوْحٌ قُدُّوْسٌ رَبُّنا وَرَبُّ المْلائِكَةِ وَالرُّوْحِ


উচ্চারণ : ‘সুবহানা জিল মুলকি ওয়াল মালাকুতি, সুবহানা জিল ইয্যাতি ওয়াল আঝমাতি ওয়াল হায়বাতি ওয়াল কুদরাতি ওয়াল কিব্রিয়ায়ি ওয়াল ঝাবারুতি। সুবহানাল মালিকিল হাইয়্যিল্লাজি লা ইয়ানামু ওয়া লা ইয়ামুত আবাদান আবাদ; সুব্বুহুন কুদ্দুসুন রাব্বুনা ওয়া রাব্বুল মালায়িকাতি ওয়ার রূহ।’

তবে, মনে রাখা উচিত যে তারাবীহ নামাজ শুদ্ধ কিনা তার সাথে এই দোয়ার কোন সম্পর্ক নেই। যদি এই দোয়াটি না পড়া হয়, তাহলে তারাবীহের নামাজ পড়া হবে না এবং এভাবে চিন্তা করা উচিত নয়। মূলত, তারাবীহের নামাজ পড়া হবে কিনা তার সাথে এই দোয়ার কোন সম্পর্ক নেই।


এই সময়ে কুরআন ও হাদিসে বর্ণিত যেকোনো দোয়া পাঠ করা যেতে পারে। আলেমদের মতে, তারাবীহ নামাজের চার রাকাত পর বিরতির সময় কুরআন ও হাদিসে বর্ণিত দুআ, তওবা এবং ইস্তেগফার পাঠ করা উত্তম।

তারাবিহ নামাজের দোয়া

সারা দেশের মসজিদে প্রতিদিন তারাবিহ নামাজের পর একটি দোয়া পাঠ করার রেওয়াজ রয়েছে। প্রাচীনকাল থেকেই দেশের মসজিদে এই দোয়া পাঠ করা হয়ে আসছে:


اَللَهُمَّ اِنَّا نَسْئَالُكَ الْجَنَّةَ وَ نَعُوْذُبِكَ مِنَ النَّارِ يَا خَالِقَ الْجَنَّةَ وَالنَّارِ- بِرَحْمَتِكَ يَاعَزِيْزُ يَا غَفَّارُ يَا كَرِيْمُ يَا سَتَّارُ يَا رَحِيْمُ يَاجَبَّارُ يَاخَالِقُ يَابَارُّ اَللَّهُمَّ اَجِرْنَا مِنَ النَّارِ يَا مُجِيْرُ يَا مُجِيْرُ يَا مُجِيْرُ- بِرَحْمَتِكَ يَا اَرْحَمَ الرَّحِمِيْنَ


উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্না নাসআলুকাল জান্নাতা ওয়া নাউজুবিকা মিনাননার। ইয়া খালিক্বাল জান্নাতি ওয়ান নার। বিরাহমাতিকা ইয়া আঝিঝু ইয়া গাফফার, ইয়া কারিমু ইয়া সাত্তার, ইয়া রাহিমু ইয়া ঝাব্বার, ইয়া খালিকু ইয়া বার্রু। আল্লাহুম্মা আঝিরনা মিনান নার। ইয়া মুঝিরু, ইয়া মুঝিরু, ইয়া মুঝির। বিরাহমাতিকা ইয়া আরহামার রাহিমিন।’

নামাজ পাঠ করার সময় মনে রাখা উচিত যে তারাবিহ নামাজ পড়া হচ্ছে কিনা তার সাথে এর কোন সম্পর্ক নেই। উদাহরণস্বরূপ, তারাবিহ নামাজের প্রতি চার রাকাতের পর যে দোয়া পড়া হয় তার সাথে তারাবিহর পবিত্রতার কোন সম্পর্ক নেই।


আমাদের সমাজের অনেকেই বিশ্বাস করেন যে তারাবিহ নামাজ সঠিকভাবে আদায় করার জন্য নামাজের পরে এই দোয়া পাঠ করা আবশ্যক। এই ধারণা বা বিশ্বাস মোটেও সঠিক নয়।

Next Post Previous Post