জেনে নিন রমজানে যেসব কাজ করবেন না তা বিস্তারিত | islamic life

জেনে নিন রমজানে যেসব কাজ করবেন না তা বিস্তারিত

জেনে নিন রমজানে যেসব কাজ করবেন না তা বিস্তারিত
জেনে নিন রমজানে যেসব কাজ করবেন না তা বিস্তারিত 

 


রমজান হলো বছরের শ্রেষ্ঠ মাস। এই মাস মুসলিম উম্মাহর জন্য আল্লাহর বিশেষ আশীর্বাদ ও রহমত। রমজান মাসে প্রচুর নেক আমল এবং যিকির করা উচিত। এর ফলে প্রচুর সওয়াব পাওয়া যাবে।

তবে, রমজান মাসের ফজিলত অর্জনের জন্য কিছু কাজ এড়িয়ে চলা প্রয়োজন। এখানে কিছু বিষয় উল্লেখ করা হল।

You may also like...

১. দেরিতে রোজা ভাঙা


রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দেরিতে রোজা ভাঙতে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেছেন, যদি সময়মতো দ্রুত রোজা ভাঙা হয়, তাহলে উম্মাহ কল্যাণের মাঝে থাকবে।


২. সাহরি না খাওয়া


সাহরি খুবই বরকতময় খাবার। আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাহরি খেতে উৎসাহিত করেছেন। যদি সাহরি খেতে না পারেন, তাহলে অন্তত অল্প পরিমাণে খাওয়াই ভালো।


৩. কেনাকাটায় ব্যস্ত থাকা


রমজানের প্রতিটি মুহূর্ত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অতএব, রমজানের সময় যেন কোনওভাবেই নষ্ট না হয় সেদিকে সর্বোচ্চ খেয়াল রাখা উচিত। রমজানের শেষ দিনগুলিতে অনেকেই কেনাকাটায় লিপ্ত হন। তবে এটি করা উচিত নয়; বরং শেষ মুহূর্তে ডুবে থাকা উচিত।


৪. মিথ্যা এবং অন্যান্য পাপ কাজ


সত্য মুক্তি দেয় এবং মিথ্যা ধ্বংস ডেকে আনে। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সত্য প্রতিষ্ঠা করা মুসলমানদের কর্তব্য। উপরন্তু, সকল ধরণের পাপ থেকে দূরে থাকা উচিত। এটি একজন মুমিনের দৈনন্দিন কাজ। তবে, রমজানে আরও সতর্কতা বাঞ্ছনীয়।


৫. অপচয় এবং অপচয়


অপচয় বা অপচয় একটি অত্যন্ত খারাপ এবং জঘন্য অভ্যাস। পবিত্র কুরআন অপচয়কারীদের শয়তানের ভাই বলে অভিহিত করেছে। আল্লাহ তাঁর প্রিয় বান্দাদের পবিত্র কুরআন ও হাদিসে অসংখ্য জায়গায় অপচয় করতে নিষেধ করেছেন। তবে এর অর্থ এই নয় যে অপচয় রোধে কৃপণতা করা উচিত। সর্বশক্তিমান আল্লাহ কৃপণ ব্যক্তিদের পছন্দ করেন না। অপচয় ত্যাগ করার অর্থ মধ্যম পথ অবলম্বন করা।

You may also like...

৬. হক পূরণ না করে কুরআন শেষ করা


কুরআন তেলাওয়াতের অনেক গুরুত্ব এবং ফজিলত রয়েছে। পবিত্র কুরআনের অর্থ বোঝার এবং তেলাওয়াত করার মাধ্যমে এটি শেষ করা উত্তম। কুরআন তেলাওয়াতের সময় কুরআনের হক নষ্ট না হয় সেদিকে সতর্ক থাকা উচিত। তাড়াহুড়ো করে বা কুৎসিতভাবে শেষ করা অনুচিত।


৭. জামাতে ফরজ নামাজ আদায়ে অলসতা


রমজান মাসে রোজাদাররা তাদের সকল কাজকর্ম বন্ধ করে দূর-দূরান্ত থেকে মসজিদে যাতায়াত করে নামাজের সময়। তারা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের জন্য মসজিদে সমবেত হয় এবং জামাতে নামাজ পড়ে। এভাবে, রোজাদাররা যখন নামাজ পড়তে মসজিদে আসে, তখন তাদের মধ্যে ঐক্য ও ভ্রাতৃত্ববোধ গড়ে ওঠে। এবং এটি ২৭ গুণ বেশি সওয়াব দেয়। তবে, জামাতে নামাজ পড়তে অলস না হওয়ার ব্যাপারে সতর্ক থাকা উচিত।


৮. অতিরিক্ত খাবার


সেহরি ও ইফতারের সময় এমন খাবার খাওয়া উচিত নয় যা পরবর্তীতে আপনার স্বাস্থ্যের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে। এছাড়াও, এত কম খাওয়া উচিত নয় যে রোজা রাখাও কঠিন হয়। কারণ ইসলামে স্বাস্থ্য সচেতনতাও গুরুত্বপূর্ণ। আল্লাহর ইবাদত করার জন্য শক্তি ও স্বাস্থ্যের প্রয়োজন। অতএব, একজন সুস্থ মুমিন আল্লাহর কাছে বেশি প্রিয়।


৯. লোক দেখানো বা জনসমক্ষে ইবাদত করা


লোক দেখানো এমন একটি কাজ বা কাজ যা লোক দেখানো এবং লোক দেখানো করে। শরিয়াতে লোক দেখানো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। শিরক দুই ধরণের। শিরক-এ-আকবর বা বড় শিরক। এবং শিরক-এ-আসগার বা ছোট শিরক। আর এই শিরক-এ-আকবর হল ছোট শিরক। অতএব, শিরক-এ-আকবর থেকে অবশ্যই দূরে থাকা উচিত।


১০. অতিরিক্ত ঘুমানো

অনেকে বিশ্বাস করেন যে তারা যত বেশি ঘুমাবেন, তাদের শরীর তত ভালো হবে। তবে, একজন সুস্থ ও প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির জন্য প্রতিদিন সাত ঘন্টা ঘুম যথেষ্ট। এর চেয়ে বেশি ঘুম বিভিন্ন সমস্যার কারণ হতে পারে। অতিরিক্ত ঘুম মাথাব্যথা এবং পিঠে ব্যথার কারণ হতে পারে। এমনকি ডায়াবেটিসের মতো রোগও দেখা দিতে পারে। তাছাড়া, অতিরিক্ত ঘুমও বিষণ্ণতার কারণ হতে পারে।


১১. জিনিসপত্রের দাম বাড়ানোর জন্য সংকট তৈরি করা


ভোক্তাদের জিম্মি করে রাখা জায়েজ নয়। এমনকি কেউ যদি তা করে 'ধনী' হয়ে যায়, তবুও কোনও লাভ নেই। তার অবৈধ সম্পদ জাহান্নামে যাওয়ার কারণ হবে। এটাও তার জন্য এই পার্থিব জীবনে অভিশাপে পরিণত হবে। অধিকন্তু, যেহেতু উপার্জন নিষিদ্ধ, তাই নামাজ, রোজা, হজ্জ এবং দান-খয়রাত কবুল হবে না। এমনকি যদি কেউ মজুদ করে এবং কৃত্রিম সংকট তৈরি করে কোটিপতি হয়ে যায়, তবুও তার জন্য দারিদ্র্য অনিবার্য।


১২.অশ্লীল চলচ্চিত্র এবং নাটক ইত্যাদি দেখা।


বর্তমানে, নারী ছাড়া সকল ধরণের নাটক অসম্পূর্ণ। নাটকগুলি নারীদের নিয়ে মঞ্চস্থ হয়। এবং নারীদের চলচ্চিত্র দেখা স্পষ্টতই নিষিদ্ধ। এই নাটকগুলির উদ্দেশ্য শিক্ষা, ইসলাম প্রচার বা পরামর্শ নেওয়া নয়। বরং, খেলাধুলা এবং অবৈধ আনন্দ উপভোগ করা। অতএব, সর্বদা এগুলি দেখা এড়িয়ে চলা গুরুত্বপূর্ণ।


১৩. অপ্রয়োজনীয় কাজের জন্য রাত জেগে থাকা

রাতে দেরি করে ঘুমাতে নিষেধ করেছেন নবীজি (সা.)। রাসুল (সা.) এশার নামাজের পর গল্পগুজব ও গভীর রাত পর্যন্ত সময় নষ্ট না করে তাড়াতাড়ি ঘুমানোর তাগিদ দিতেন। তবে গুরুত্বপূর্ণ ও কল্যাণজনক কাজে রাত জাগতে নিরুৎসাহিত করা হয়নি। তাই কোনো গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয় কারণে রাত জাগতে মানা নেই। তবে অযথা গল্প-গুজব, অহেতুক নেট ব্রাউজিং ও গুরুত্বহীন কাজে সময় নষ্ট উচিত নয়। বরং তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়া আবশ্যক।


১৪. দুনিয়াবী ব্যস্ততায় মগ্ন থাকা


ইবাদতের মাস রমজানে বেশি বেশি আমলের কথা রয়েছে। কিন্তু আমরা অনেকেই ব্যস্ত থাকি দুনিয়াবি কাজে। এটা কাম্য নয়। এ মাসে বেশি বেশি দোয়া-ইস্তেগফার করা  উচিত। হাদিসে এসেছে, ‘ইফতারের মূহূর্তে আল্লাহ তাআলা বহু লোককে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে থাকেন। মুক্তির এ প্রক্রিয়া রমজানের প্রতি রাতেই চলতে থাকে।’ (জামিউস সাগির, হাদিস : ৩৯৩৩)

You may also like...

১৫. বিদআত করা


ইসলামের পরিভাষায় বিদআত বলা হয়, দ্বিনের মধ্যে এমন বিষয় সৃষ্টি করা, যা রাসুলুল্লাহ (সা.) ও সাহাবায়ে কেরামের যুগে ছিল না; বরং পরে তা উদ্ভাবন করা হয়েছে। বিদআতের বিরুদ্ধে মহানবী (সা.) অত্যন্ত কঠিন হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। বিদআত জাহান্নামে নিয়ে যায় বলেছেন। তাছাড়া কিয়ামতের দিন বিতআতকারী চরমভাবে লাঞ্ছিত হবে। তাই সব সময় বিদআত থেকে দূরে থাকতে হবে।

Next Post Previous Post