রমজান মাসের ফজিলত সম্পর্কে হাদিস ও কোরানের আয়াত | Verses and Hadiths about fasting

রমজান মাসের ফজিলত সম্পর্কে হাদিস ও কোরানের আয়াত 

রমজান মাসের ফজিলত সম্পর্কে হাদিস ও কোরানের আয়াত
রমজান মাসের ফজিলত সম্পর্কে হাদিস ও কোরানের আয়াত


ইসলামের ৫টি স্তম্ভের মধ্যে সিয়াম বা রোজা অন্যতম একটি স্তম্ভ।  রোজা আল্লাহর অত্যন্ত প্রিয় ইবাদত। হাদিসে কুদসীতে আল্লাহ তায়ালা রোজার প্রতিদান নিজ হাতে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। রোজার ফজিলত-মর্যাদা সম্পর্কে অসংখ্য কোরান ও হাদিস বর্ণিত হয়েছে। চলমান রমজান মাস উপলক্ষ্যে আমাদের আজকের আলোচনায়  রোজা সম্পর্কিত কোরআনের ৪টি আয়াত এবং ৯টি হাদীস  তুলে ধরা হলো

রমজান মাসের ফজিলত সম্পর্কে  কোরানের আয়াত :

এক. আল্লাহতায়াল সুরা বাকারার ১৮৩ নম্বর আয়াতে বলেছেন, হে মুমিনগণ! তোমাদের জন্য রোজার বিধান দেওয়া হলো, যেমন বিধান তোমাদের পূর্ববর্তীগণকে দেওয়া হয়েছিল, যাতে করে তোমরা তাকওয়া বা আল্লাহ ভীরুতা অবলম্বন করতে পারো।

দুই. সুরা বাকারার ১৮৪ নম্বর আয়াতে আল্লাহতায়ালা বলেছেন, আর যারা রোজা রাখার সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও রোজা রাখতে চায় না (যারা রোজা রাখতে অক্ষম), তারা এর পরিবর্তে একজন মিসকিনকে খাদ্য দান করবে। পরন্তু যে ব্যক্তি খুশির সঙ্গে সৎকর্ম করে, তা তার জন্য কল্যাণকর হয়। আর যদি তোমরা রোজা রাখ, তাহলে তা তোমাদের জন্য বিশেষ কল্যাণের; যদি তোমরা উপলব্ধি করতে পারো।

তিন. কোরআনুল কারিমে সুরা বাকারার ১৮৫ নম্বর আয়াতে আল্লাহতায়ালা বলেছেন, রমজান মাস। এ মাস পেলেই মুমিন মুসলমানের জন্য রোজা রাখা আল্লাহর নির্ধারিত বিধান। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা এ মাস পাবে তারা যেন এ মাসে সিয়াম পালন করে এবং কেউ অসুস্থ থাকলে কিংবা সফরে থাকলে অন্য সময় এ সংখ্যা পূরণ করবে।

আল্লাহ তোমাদের জন্যে যা সহজ তাই চান এবং যা তোমাদের জন্যে কষ্টকর তা চান না। এ জন্য যে তোমাদের সংখ্যা পূর্ণ করবে এবং তোমাদের সৎপথে পরিচালিত করার কারণে তোমরা আল্লাহর মাহিমা ঘোষণা করবে এবং যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারো।

চার. আল্লাহতায়ালা সুরা বাকারার ১৮৭ নম্বর আয়াতে বলেছেন, রমজানের রাতে তোমাদের জন্য তোমাদের স্ত্রীদের বৈধ করা হয়েছে। তারা তোমাদের জন্যে এবং তোমরাও তাদের জন্যে পরিচ্ছদ। আল্লাহ জানেন, তোমরা তোমাদের নিজেদের সঙ্গে খিয়ানত করেছিলে, অতঃপর তিনি তোমাদের তাওবা কবুল করেছেন এবং তোমাদের মাফ করেছেন।


You may also like...

রমজান মাসের ফজিলত সম্পর্কে হাদিস :

 রোজা আল্লাহর অত্যন্ত প্রিয় ইবাদত। এর প্রতিদান তিনি নিজ হাতেই দেবেন। রোজার ফজিলত-মর্যাদা সম্পর্কে অসংখ্য হাদিস বর্ণিত হয়েছে। এখানে এ সম্পর্কিত ৯ টি হাদিস তুলে ধরা হলো—


১। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, হাদিসে কুদসিতে রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আদম সন্তানের প্রত্যেক আমল তার নিজের জন্য—রোজা ব্যতীত। কারণ, রোজা আমার জন্যই এবং আমি নিজেই তার প্রতিদান দেব।’ (মহানবী সা. আরও বলেন) ‘রোজা ঢাল স্বরূপ। তোমাদের কেউ যেন সিয়াম পালনের দিন অশ্লীলতায় লিপ্ত না হয় এবং ঝগড়া-বিবাদ না করে। যদি কেউ তাকে গালি দেয় অথবা তার সঙ্গে ঝগড়া করে, তাহলে সে যেন বলে, আমি একজন রোজাদার। যাঁর হাতে মুহাম্মদের প্রাণ তাঁর শপথ! অবশ্যই রোজাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহর কাছে মেশকের সুগন্ধের চেয়েও সুগন্ধময়। রোজাদারের জন্য রয়েছে দুটি খুশির মুহূর্ত আছে, যা তাকে আনন্দিত করে। যখন সে ইফতার করে, সে খুশি হয় এবং যখন সে তার পালনকর্তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে, তখন রোজার বিনিময়ে আনন্দিত হবে।’ (বুখারি, হাদিস: ১৯০৪

২। হজরত হুজায়ফা (রা.) বলেন, আমি মহানবী (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ‘মানুষের পরিবার, ধন-সম্পদ ও প্রতিবেশীর ব্যাপারে ঘটিত বিভিন্ন ফেতনা ও গুনাহর কাফফারা হলো নামাজ, রোজা ও সদকা।’ (বুখারি, হাদিস: ১৮৯৫)

৩। হজরত সাহল ইবনে সাআদ (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবী (সা.) এরশাদ করেন, ‘জান্নাতের এক প্রবেশদ্বার রয়েছে, যার নাম রাইয়ান। কিয়ামতের দিন ওই প্রবেশদ্বার দিয়ে রোজাদারগণ প্রবেশ করবে। তারা ছাড়া আর কেউই ও দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে না। বলা হবে, ‘কোথায় রোজাদারগণ?’ সুতরাং তারা ওই দরজা দিয়ে (জান্নাতে) প্রবেশ করবে। এর পর যখন তাদের সর্বশেষ ব্যক্তি প্রবেশ করবে, তখন সেই দরজা বন্ধ করা হবে। ফলে তা দিয়ে আর কেউই প্রবেশ করতে পারবে না।’ (বুখারি, হাদিস: ১৮৯৬)


৪। হজরত আবু সাইদ (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে বান্দা আল্লাহর পথে একদিন মাত্র রোজা রাখবে, সেই বান্দাকে আল্লাহ বিনিময়ে জাহান্নাম থেকে ৭০ বছরের পথ পরিমাণ দূরত্বে রাখবেন।’ (বুখারি, হাদিস: ২৮৪০)

You may also like...

৫। হজরত উসমান বিন আবুল আস থেকে বর্ণিত, মহানবী (সা.) এরশাদ করেন, ‘রোজা জাহান্নাম থেকে বাঁচার জন্য ঢালস্বরূপ; যেমন যুদ্ধের সময় নিজেকে রক্ষা করার জন্য তোমাদের ঢাল থাকে।’ (মুসনাদে আহমাদ, সহিহুল জামিউস সাগির, হাদিস: ৩৮৭৯)


৬। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, ‘কিয়ামতের দিন রোজা ও কোরআন বান্দার জন্য সুপারিশ করবে। রোজা বলবে, ‘হে আমার প্রতিপালক, আমি তাকে পানাহার ও যৌনকর্ম থেকে বিরত রেখেছিলাম। সুতরাং তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ গ্রহণ করুন।’ কোরআন বলবে, ‘আমি তাকে রাতের ঘুম থেকে বিরত রেখেছিলাম। সুতরাং তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ গ্রহণ করুন।’ মহানবী (সা.) আরও বলেন, ‘অতএব উভয়ের সুপারিশ গৃহীত হবে।’ (মুসনাদে আহমাদ, সহিহ তারগিব, হাদিস: ৯৬৯)


৭। হজরত আবু উমামা (রা.) বর্ণনা করেন, আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসুল, আমাকে এমন কোনো আমলের আজ্ঞা করুন; যার বিনিময়ে আল্লাহ আমাকে লাভবান করবেন।’ (অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘যার মাধ্যমে আমি জান্নাত যেতে পারব’) তিনি বললেন, ‘তুমি রোজা রাখো। কারণ, এর সমতুল্য কিছু নেই।’ পুনরায় আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসুল, আমাকে কোনো আমলের আদেশ করুন।’ তিনি পুনরায় একই কথা বললেন, ‘তুমি রোজা রাখো। কারণ, এর সমতুল্য কিছু নেই।’ (নাসায়ি, সহিহ্ তারগিব, হাদিস: ৯৭৩)


৮। হজরত হুজায়ফা (রা.) বর্ণনা করেন, মহানবী (সা.) আমার বুকে হেলান দিয়ে ছিলেন। তখন তিনি বললেন, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলার পর যে ব্যক্তির জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে একদিন রোজা রাখার পর যে ব্যক্তির জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় কিছু সদকা করার পর যে ব্যক্তির জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটবে, সেও জান্নাত প্রবেশ করবে।’ (মুসনাদে আহমাদ, সহিহ্ তারগিব, হাদিস: ৯৭২)

৯| রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, 'যখন রমজান মাস আসে, তখন জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়, জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়; শয়তানকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়। ' (বুখারি, খণ্ড: ৩, হাদিস: ১,৭৭৮)। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, 'যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় রমজান মাসে সিয়াম পালন করবে, তার অতীতের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।

You may also like...

রোজার আয়াত ও হাদিস

রোজার ফজিলত সম্পর্কে হাদিস আরবি

রোজার ফজিলত ও গুরুত্ব

৩০ রোজার ফজিলত দলিল সহ

রোজা সম্পর্কে কুরআনের আয়াত আরবি

সাওমের গুরুত্ব ও তাৎপর্য

রোজার ফজিলত ও গুরুত্ব pdf

রোজা সম্পর্কে হাদিস

এখানে এ সম্পর্কিত ৯ টি হাদিস


Next Post Previous Post