যাকাতের নিসাব কি । যাকাত দেওয়ার সঠিক পদ্ধতি

 যাকাতের নিসাব কি । যাকাত দেওয়ার সঠিক পদ্ধতি

যাকাতের নিসাব কি । যাকাত দেওয়ার সঠিক পদ্ধতি
 যাকাতের নিসাব কি । যাকাত দেওয়ার সঠিক পদ্ধতি


যাকাত শব্দটি আরবী এর আভিধানিক অর্থ- যে জিনিস পরিমাণে বেশি হয় বা ক্রমস বৃদ্ধি পায় তাকে ইসলামী ভাষায় যাকাত বলা হয়। যাকাত ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের একটি। যাকাত ইসলামী অর্থের ভিত্তি। এজন্য যাকাত দেওয়ার ফরজ। সকল সামর্থবান মুসলমান গরিব অসহায়দের যাকাত দিতে বাধ্য। দুর্ভাগ্যবশত, এটা সত্য যে, যাকাত গণনা করতে গিয়ে আমরা প্রত্যেকেই বিভিন্ন জটিলতার সম্মুখীন হই। আমরা সঠিক পদ্ধতি না জেনে যাকাত দেয়, ফলে যাকাত কবুল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। তাই যাকাত প্রদানের সঠিক পদ্ধতি সকল মুসলমান জানা জরুরী।


যাকাতের নিসাব কি:

নিসাব হলো ন্যূনতম সম্পদের সেই সীমা, যা কারও কাছে এক বছর অক্ষত থাকলে তার ওপর যাকাত ফরজ হয়। সাধারণত, নিসাব নির্ধারণ করা হয় স্বর্ণ বা রূপার মূল্যের ভিত্তিতে।


ইসলামের বিধান অনুসারে, যার কাছে ৭.৫ ভরি (৮৭.৪৮ গ্রাম) স্বর্ণ বা ৫২.৫ ভরি (৬১২.৩৬ গ্রাম) রূপা অথবা এর সমপরিমাণ নগদ অর্থ ও সম্পদ থাকে, এবং তা এক চন্দ্র বছর ধরে থাকে, তাকে তার মোট সম্পদের ২.৫% হারে যাকাত প্রদান করতে হয়।

যাকাতের নিসাব নির্ধারণের এই পদ্ধতি ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে সম্পদ বণ্টনের মাধ্যমে সামাজিক ও অর্থনৈতিক ভারসাম্য রক্ষা করে। এটি ধনীদের অন্তরে দানশীলতা ও সহানুভূতি সৃষ্টি করে।


এবং দরিদ্রদের জীবনমান উন্নত করতে সহায়তা করে। সঠিকভাবে যাকাত প্রদান করলে ব্যক্তিগত সম্পদ পবিত্র হয় এবং সমাজে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা আসে।

You may also like...

যাকাতের নিসাব কি?


যাকাতের নিসাব হলো সেই নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পদ বা সম্পত্তির পরিমাণ, যার মালিক হলে একজন মুসলিমের ওপর যাকাত ফরজ হয়।


যাকাতের নিসাব কত প্রকার ও কি কি?


ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী, নিসাবের পরিমাণ দুই প্রকার সম্পদের ভিত্তিতে নির্ধারণ করা হয়ঃ


১. স্বর্ণ ও রুপার ভিত্তিতে নিসাব

স্বর্ণ ৭.৫ ভরি (৮৭.৪৮ গ্রাম)

রূপা ৫২.৫ ভরি (৬১২.৩৬ গ্রাম)


যদি কারও কাছে এই নিসাব পরিমাণ বা তার বেশি স্বর্ণ বা রূপা (অথবা এর সমমূল্যের নগদ টাকা) এক বছর ধরে থাকে, তবে তার ওপর ২.৫% হারে যাকাত ফরজ হয়।


২. নগদ অর্থ, ব্যবসায়িক পণ্য ও সম্পদের ক্ষেত্রে


যাকাতযোগ্য সম্পদের পরিমাণ যদি ৬১২.৩৬ গ্রাম রূপার মূল্যের সমপরিমাণ অর্থ হয় এবং তা এক বছর অক্ষত থাকে, তবে তাতে যাকাত দিতে হবে।

যাকাত দেওয়ার সঠিক পদ্ধতি:

যাকাত ফরয হওয়ার প্রধান শর্ত

যাকাত ফরয হওয়ার কিছু মৌলিক শর্ত রয়েছে। যথা-

মুসলিম হওয়া: কাফেরদের উপর যাকাত ফরয নয়। মুসলিম দেশে বসবাসকারী কাফেররা জিজিয়া বা কর প্রদান করবে যা সম্পূর্ণ ভিন্নভাবে গণনা করা হয়। যাকাত শুধুমাত্র মুসলমানদের উপর ফরজ। কারণ যাকাত হল এমন একটি ইবাদত যার মাধ্যমে কেউ মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে পারে কিন্তু অবিশ্বাসীরা অবশ্যই পরকালে জবাবদিহির সম্মুখীন হবে।

স্বাধীন হওয়া: দাসদের উপর যাকাত ফরয নয়। কারণ তারা সাধারণত সম্পদের মালিক হতে পারে না। বরং তারাই অন্যের অধীনস্থ।

নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকা: কোনো ব্যক্তি সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ অথবা তার সমপরিমাণ মূল্যে ৪,৫০,০০০ (সাড়ে চার লক্ষ) টাকার অথবা ৫২.৫ ভরি রৌপ্য বা তার সমপরিমাণ মূল্য ৪০,০০০ (চল্লিশ হাজার) টাকা। এই টাকার মালিক হলে তার উপর যাকাত ফরয।  

এখানে মনে রাখা জরুরী যে, রৌপ্য হিসাব অনুযায়ী যাকাত দিতে হবে নাকি স্বর্ণের হিসাব অনুযায়ী যাকাত দিতে হবে তা ব্যক্তির উপর নির্ভর করে। ব্যক্তি চাইলে বর্তমান বাজারের রূপার হিসাব অনুযায়ী ৪০,০০০ টাকা মূল্যের সাড়ে বাহান্ন ভরি রূপার মালিক হলে তা নিজের উপর ফরজ মনে করে যাকাত দিতে পারে। অথবা স্বর্ণের হিসাব অনুযায়ী তার উপর যাকাত ফরয হওয়া পর্যন্ত সে অপেক্ষা করতে পারে।

সম্পদের এক বছর অতিবাহিত হওয়া: যেদিন ব্যক্তি নিছাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হবে, সেদিন থেকে এক চন্দ্র বছর তাকে হিসাব করতে হবে। এর পর থেকে প্রতি বছর ওই একই তারিখে তাকে যাকাত বের করতে হবে।


আরও পড়ুন: 


কতভাগ যাকাত দিতে হয়

জাকাতযোগ্য সম্পদের ‘রুবউ উশর’ অর্থাৎ  ৪০ ভাগের ১ ভাগ (যা শতকরা ২.৫%)  জাকাত প্রদান করতে হবে। আপনার নিসাব পরিমাণ যত সম্পদ আছে সবগুলো টাকায় হিসাব করে কত টাকার সম্পদ আপনার কাছে  তার ৪০ ভাগের ১ভাগ যাকাত দিতে হবে।


মনেকরুন, আপনার কাছে  ৫০০,০০০/- টাকার নিসাব পরিমাণ সম্পদ আছে। এই সম্পদের ৪০ ভাগের ১ভাগ আসে : (৫০০,০০০÷৪০)=১২৫০০ টাকা। যদি পার্সেন্ট হিসাব করেন তাহলে: (৫০০,০০০÷১০০×২.৫)=১২৫০০ টাকা যাকাত দিতে হবে।

 You may also like...

যাকাতযোগ্য সম্পদ

সর্বশক্তিমান আল্লাহ চার প্রকারের দ্বারা যাকাতযোগ্য সম্পদ গণনা করা ফরজ করেছেন।

উৎপাদিত ফসল: জমিতে উৎপাদিত ফসলের উপর যাকাত দিতে হবে। ইসলাম আবাদি জমিতে উৎপাদিত ফসলের ওপর উশর নির্ধারণ করেছে।

ব্যবসায়িক সম্পদ: যাকাত সেই সমস্ত সম্পদের উপর প্রযোজ্য যার মাধ্যমে একজন ক্রমাগত অর্থ উপার্জন করে এবং ব্যবসা করে। এক কথায়, সম্পদ বৃদ্ধির উপর যাকাত ফরজ।

সোনা-রোপা: সোনা এবং রৌপ্য বা এর পরিবর্তে ব্যবহৃত যেকোনো বিশ্ব মুদ্রা হতে পারে। যেমন টাকা, ডলার, রিয়াল ইত্যাদি বিনিময়ের জন্য গৃহীত মুদ্রার উপর যাকাত প্রদেয়।

চতুষ্পদ প্রাণি: নির্ধারিত সংখ্যা অনুযায়ী হালাল চতুষ্পদ প্রাণি গুলিতে যাকাত ফরজ। যাকাত দেওয়ার

Next Post Previous Post