মাহে রমজানের ফজিলত, গুরুত্ব ও তাৎপর্য

মাহে রমজানের ফজিলত, গুরুত্ব ও তাৎপর্য


সিয়াম ও রমজান : শিক্ষা-তাৎপর্য-মাসায়েল



সিয়াম ও রমজান : শিক্ষা-তাৎপর্য-মাসায়েল

সিয়াম ফার্সি শব্দ। আরবী শব্দ সাওম এর প্রতিশব্দ এটি সাওম এর শাব্দিক অর্থ বিরত থাকা। ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায়, সুবহি সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সর্ব প্রকার পানাহার, কামাচার ও

পাপের কাজ থেকে বিরত থাকাকে সাওম বলে।প্রত্যেক প্রাপ্ত বয়স্ক মুসলমানের উপর চান্দ্র বৎসরের নবম মাস রমযান মাসে রােযা রাখা ফরষ । এজন্য সাওম বা রােযা বিষয়টির সাথে রমযান নামক। T 2) হযরত ১৭ মাসটি ওতােপ্রােত ভাবে জড়িত। এই মাসেই ৭

অবতীর্ণ হয়েছে বিশ্ব মানবের মুক্তি সনদ মহা এই Tয় ।আল কুরআন। এ জন্য এই মাসের মর্যাদা আরাে বহু গুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। মহান আল্লাহ। বলেন, “রমযান মাস, যাতে নাযিল করা হয়েছে আল কুরআন যা মানুষের জন্য। হেদায়েত এবং সত্য পথ যাত্রীর জন্য সুস্পষ্ট পথনির্দেশ আর ন্যায় ও অন্যায়ের মাঝে পার্থক্য বিধানকারী। কাজেই তােমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি এ মাসটি পাবে সে যেন তাতে সাওম পালন করে” (আল কুরআন, ২:১৮৫)। শুধু আল কুরআন নয় বড় বড় আসমানী কিতাবসমূহ আল্লাহ তা'আলা এ মাসেই অবতীর্ণ করেছেন। 

You may also like...

রমযান মাসের ৬ তারিখে হযরত দাউদ (আ)-এর উপর যাবূর, ১২ তারিখে হযরত মুসা (আ)-এর উপর তাওরাত, ১৮ তারিখে হযরত ঈসা (আ)-এর উপর ঈঞ্জিল ও রমযানের শেষ দশ দিনের যে কোন বিজোড় রাত্রে অর্থাৎ লাইলাতুল কদরে অবতীর্ণ হয় আল কুরআন। মুসনাদে আহমদ' গ্রন্থে আছে, “রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন, হযরত ইব্রাহীম (আ)-এর সহীফা রমযান মাসের ১ তারিখে নাযিল হয়েছিল। রমযানের ৬ তারিখে তাওরাত, ১৩ তারিখে ঈঞ্জিল এবং ২৪ তারিখে আল-কুরআন নাযিল

শুধু আল কুরআন নয় বড় বড় আসমানী কিতাবসমূহ। আল্লাহ তা'আলা এ মাসেই অবতীর্ণ করেছেন। রমযান। মাসের ৬ তারিখে হযরত দাউদ (আ)-এর উপর যাকূর, ১২ তারিখে হযরত মূসা (আ)-এর উপর তাওরাত, ১৮ তারিখে হযরত ঈসা (আ)-এর উপর ঈঞ্জিল ও রমযানের শেষ দশ দিনের যে কোন বিজোড় রাত্রে অর্থাৎ লাইলাতুল কদরে অবতীর্ণ হয় আল কুরআন

হয়েছে। হযরত জাবির (রা) বলেন, যাবূর রমযানের ১২ তারিখে এবং ঈঞ্জিল ১৮ তারিখে নাযিল হয়েছে (তাফসীরে মা' আরিফুল কুরআন)। অতএব বলা যায় রমযান মাসের ফযিলত দুটি কারণে মহান আল্লাহর নিকট এত বেশি। একটি হলাে কুরআন নাযিল আর অপরটি হলাে, হাজার মাসের চেয়ে শ্রেষ্ঠ রজনী লাইলাতুল কদর এ মাসেই। বিদ্যমান। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন, “নিশ্চয়ই আমি এই কুরআন লাইলাতুল কদরে অবতীর্ণ করেছি। আপনি জানেন লাইলাতুল কদর কী? লাইলাতুল কদর হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ" (আল কুরআন, সূরা কদর ১-৩)।


| রমযানের সাওম পালন ফরয। প্রত্যেক প্রাপ্ত বয়স্ক মুসলমানের উপর রমযানের সাওম পালন করা ফরয। এ প্রসঙ্গে আল কুরআনে এসেছে, "হে ঈমানদারগণ! তােমাদের উপর সাওম পালন ফরয করা হয়েছে যেমন ফরয করা হয়েছিল তােমাদের পূর্ববর্তীগণের উপর, যাতে তােমরা মুত্তাকী হতে পার” (আল কুরআন, সূরা বাকারা ১৮৩)। আয়াতে পূর্ববর্তী বলতে হয়রত আদম (আ) কে

-ও শরীয়তকে বুঝায়। তাদের সাওম পালনের ধরন, পদ্ধতি ও সময় সীমা ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। (তাফসীরে রূহুল মাআনী)। সাওম বা রােযা একটি কষ্টকর ইবাদত। তাই উম্মতের মহাম্মদী যাতে হতাশ ও হতোদ্যম না হয়ে পড়ে এজন্য আল্লাহ তা'আলা তাঁর নির্দেশের সাথে সথে এটিও উল্লেখ করেছেন যে, এটা শুধু তােমাদের জন্য ফরয করা হয়নি, বরং তােমাদের পূর্ববর্তী উম্মতগণের উপরও এটি ফরয করেছিলাম। বাস্তবতা হলাে, কোন একটি ক্লেশকর কাজে অনেক লােক জড়িত হয়ে পড়লে সেটি আর অতটা কষ্টকর মনে হয় না, অনেকটা স্বাভাবিক ও সাধারণ বলে মনে হয় (রূহুল মা' আনী)।

হযরত আদম (আ)-এর রােযা। বিখ্যাত সাধক ও ওলিকুল শিরােমনী হযরত আব্দুল কাদের জিলানী (র) বর্ণনা করেন যে, যীর ইবন শুরাইহ বর্ণনা করেন যে, একদা আমি বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ (রা)কে আইয়ামে বীযের রােযা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম।

সাওম বা রােযা একটি কষ্টকর ইবাদত। তাই উম্মতের মুহাম্মদী যাতে হতাশ ও হতােদ্যম না হয়ে পড়ে এজন্য আল্লাহ তা'আলা তাঁর নির্দেশের সাথে সথে এটিও উল্লেখ করেছেন যে, এটা শুধু তােমাদের জন্য ফরয করা হয়নি, বরং তােমাদের পূর্ববর্তী উম্মতগণের উপরও এটি ফরয় করেছিলাম।

বললেন, মহান আল্লাহ রাব্দুল আলামীন হযরত আদম (আ) কে জান্নাতের একটি ফল। খেতে নিষেধ করেছিলেন। হযরত আদম (আ) শয়তানের ধোকায় পড়ে সেই ফল ভক্ষণ করে পৃথিবীতে নেমে আসতে বাধ্য হন। তখন তার শরীরের রঙ কালাে হয়ে যায়। তার। এ অবস্থা দেখে ফেরেশতাগণ কেদে কেঁদে মহান আল্লাহর নিকট দো'আ করতে লাগলেন যে, আদম (আ) আপনার কাছে সবচেয়ে প্রিয় সৃষ্টি। আপনি তাকে জান্নাতে স্থান দিয়েছিলেন, আমাদের দ্বারা সিজদা করিয়েছিলেন। 

আর মাত্র একটি ভুলের জন্য তার শরীরের রঙ কালাে করে দিলেন? তাদের জন্য মহান আল্লাহ হযরত আদম (আ)- | এর নিকট ওহী পাঠালেন যে, তুমি চান্দ্র মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে রােযা পালন। কর অর্থাৎ আইয়ামে বীযের রােযা রাখ। হযরত আদম (আ) তাই করলেন। তখন। পুনরায় হযরত আদম (আ)-এর রঙ উজ্জ্বল হলাে (গুনিয়াতুত্তালিবীন)।

| হযরত নূহ (আ)-এর রােযা: হযরত নূহ (আ) ইয়াওমুল ফিতর ও ইয়াওমুল আযহা ছাড়া বাকি দিনগুলােতে রােযা রাখতেন (ইবনে মাজাহ)।

নন হযরত ইব্রাহিম (আ)-এর বােয়া )  হযরত ইবাহীম (আ)-এর যুগের রােযা সম্পর্কে বেশি কিছ জানা যায় না। তবে আল্লামা ইবনে কাছীর একটি বর্ণনায় আছে, হযরত নহ (আ)-এর যুগ থেকে প্রত্যেক উম্মতের উপর প্রত্যেক মাসে তিনটি করে রােযা ফরয ছিল। হযরত মুহাম্মদ (সা)-এর যুগে। রমযান এক মাস রােযা ফরয হওয়ার পর সেটি আর ফরয থাকেনি। (তাফসীরে ইবনে কাছীর)। এই বর্ণনা থেকে বুঝা যায়, হযরত ইব্রাহীম (আ)-এর যুগেও তিটি রােযা ছিল। কোন কোন বর্ণনায় এসেছে, তার যুগেরও ত্রিশটি রােযা ছিল।

" | হ্যরত মূসা (সা) এর যুগে রােযা হযরত মূসা (আ)-এর যুগের রােযা সম্পর্কে হযরত আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) যখন মদিনায় হিযরত করে আসলেন তখন তিনি ইহুদীদের দেখলেন যে, তারা মুহাররম মাসের ১০ তারিখে তথা আশুরার রােযা পালন করছে। তখন তিনি (সা) তাদেরকে বললেন, “তােমরা কিসের রােযা রাখছ?" 

উত্তরে ইহুদীগণ বললাে, এটা সেই মহান দিন যেদিন আল্লাহ তা'আলা হযরত মূসা (আ) ও তার কওমকে ফির'আওনের কবল থেকে মুক্ত করেছিলেন। এবং ফিরআউন ও তার সাথীদেরকে নীল নদে ডুবিয়ে মেরেছিলেন। ফলে মূসা (আ) আল্লাহর শুকরিয়াস্বরূপ সেদিন রােযা। রেখেছিলেন। তাই আমরাও রােযা রেখেছি।


You may also like...

১, হযরত দাউদ (আ)-এর রােযা হযরত দাউদ (সা)-এর যুগেও রােযার প্রচলন ছিল। তিনি বছরের অর্ধেক সময় রােযা রাখতেন আর অর্ধেক সময় রােযা ছাড়া কাটাতেন। হাদিসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন, “আল্লাহ রাব্বল আলামীনের নিকট সবচেয়ে প্রিয় রােযা হযরত দাউদ (আ)এর রােযা। তিনি একদিন রােযা পালন করতেন, অন্যদিন রােযা ব্যতীত কাটাতেন। (বুখারী, মুসলিম)।

হযরত ঈসা (সা) এর রােযা। হযরত ঈসা (আ)-এর যুগে ও তার জন্মের পূর্বেও রােযার প্রচলন ছিল। হযরত ঈসা (আ)-এর সময় লােকেরা তার মাতা হযরত মরিয়ম (আ)কে তার জন্মবত্তান্ত সম্পর্কে প্রশ্ন করলে তিনি উত্তরে বলেন যে, “আমি মহান রবের উদ্দেশ্যে মানতের রােযা রেখেছি। সুতরাং আজ আমি কোন মানুষের সাথে কথা বলবাে না। তাই চাই জাহেলী যুগে রােযা  ইসলাম পূর্ব জাহেলী যুগে আরবে রােযার প্রচলন ছিল। তখনকার রীতি অনুযায়ী। আশুরার দিন কাবা শরীফে গিলাফ চড়ানাে হতাে। ঐ দিন আরববা রােযা রাখতে। হাফেয ইবন হাজার আসকালানী (র)কে এ রােযার ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, জাহেলী যুগে কুরাইশরা কোন পাপ করলে সে পাপকে অনেক বড় মনে করতাে। তখন। তাদেরকে বলা হয়, তোমরা আশুরার রােযা রাখ, তাহলে এর প্রায়শ্চিত্ত হয়ে যাবে।

* রোযার তাৎপর্য রােযা বা সাওমের আভিধানিক অর্থটির সাথে এর তাৎপর্য জড়িয়ে আছে। সাওম অর্থ। “বিরত থাকা' । এ বিরত থাকা শুধু পানাহার ও যৌনাচার থেকে নয়; বরং এদু'টি হলাে,

শুধু মাত্র রােযার কারণে হারাম হয়ে যাওয়া হালাল বিষয়। ইসলামে হালাল ও বিধিবদ্ধ বিষয় যদি কেবল রোষার কারণে হারাম হতে পারে তা হলে হারাম ও নিষিদ্ধ বিষয়, যা করলে শাস্তির বিধান আছে তার কী অবস্থা হবে? এজন্য রমযানুল মুবারকে পানাহার; কামাচার থেকে বিরত থাকার পাশাপাশি সকল প্রকার পাপাচার তথা আল্লাহর মর্জির বিপরী সকল নিষিদ্ধ কর্ম থেকেও নিজেকে বিরত রাখতে হবে। বাসলাহ (সা) কর্তৃক নিন্দনীয় ও বর্জনীয় সকল ক্রিয়াকলাপ থেকেও নিজেকে বিরত থাকতে হবে।  যারা নির্ধারিত সময় পর্যন্ত পানাহার, কামাচার থেকে বিরত থাকে বটে; কিন্তু বর্বরতা, মাদকাসক্তি, ব্যক্তিচার, ধর্ষণ, সন্ত্রাস, গুম, হয়রানী, হিংসা-দ্বেষ, অসভ্যতা, ইভটিজিং,।

আরো পড়তে পারেন >>>

পাশবিকতা, মানবাধিকার হরণের ন্যায় ঘৃণ্য পাপাচার থেকে বিরত না রাখে তাদের সিয়াম সাধনা নিছক আনুষ্ঠানিকতা ও উপবাস ব্রত ছাড়া বাড়তি কোন কল্যীন বয়ে আনবে না। তাদের এরূপ উপবাসের আল্লাহর কোন প্রয়ােজন নেই। এ সম্পর্কে হাদীসে এসেছে, হযরত আবু হােরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত আছে যে, “রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন, যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা ও পর নিন্দা ইত্যাদি পরিত্যাগ করতে পারলােনা তারপনাহার পরিত্যাগ করার আল্লাহর কোন প্রয়ােজন নেই” (সহীহ বুখারী।

 রােযা ফরয করার অন্তনিহিত উদ্দেশ্য সম্পর্কে আল্লাহ তা'আলা নিজেই আয়াতের শেষে, উল্লেখ করে বলেন যে, “...যাতে যাতে তােমরা মুত্তাকী হতে পার। এ তাকওয়া। অর্থ, পরহেযগারী, আল্লাহভীতি ইত্যাদি শব্দ দিয়ে পরিপূর্ণভাবে প্রকাশ করা যায় না। তাকওয়ার মূল অর্থ হলাে, আল্লাহ কর্তৃক নির্দেশিত কাজ আঞ্জাম দেয়া ও তার নিষিদ্ধ কার্যবলি পরিহার করে চলা । পরকালে আল্লাহর আদালতে জবাবদিহিতার দৃঢ় প্রত্যয়। নিয়ে জীবনের সকল ক্ষেত্রে আল্লাহর নিষিদ্ধ কত যাবতীয় কাজ বর্জন করার নাম তাকওয়া। এক কথায়, তাকওয়া হলাে, আল্লাহর সন্তোষ অর্জনের লক্ষ্যে তীর মর্জি মােতাবেক জীবনের সকল কার্যাবলি সম্পাদনের নাম। পবিত্র, বিশুদ্ধ, মার্জিত ও সুসভ্য। জীবন যাপনই তাকওয়া।

 আল্লাহ তাআলার সকল ইবাদতের মধ্যে এমাত্র রােযার মাধ্যমেই বান্দা তাকওয়া অর্জনের ট্রেনিং নিয়ে থাকে। কারণ একজন রােযাদার ব্যক্তি আড়ালে আবডালে একদুই চুমুক পানি পান করে নেয়ার যথেষ্ট সুযােগ পায়। কিন্তু কোন রােযাদারের বেলায় এমনটি ঘটে না। কারণ, সে আল্লাহকে ভয় করে এবং তারই ভয়ে তারই সন্তুষ্টির আশায় রােযা রেখেছে। তার কাছে লােকানাের কোন সুযােগ নেই, এ সম্পর্কে সে সদা সচেতন। অন্য কোন ইবাদতের মধ্যে এ বিষয়টির উপস্থিতি কম বিধায়তাকওয়াকে রােযার সর্থে সম্পৃক্ত করা হয়েছে।  রােয়া আল্লাহ তা'আলার নিকট বিশেষ মর্যাদাবান ইবাদত। অন্যান্য ইবাদতের প্রতিদান তিনি ফিরিশতার মাধ্যমে প্রদান করবেন, কিন্তু রােযার পুরস্কার দেবেন। তিনি নিজে এ। সম্পর্কে হাদীসে এসেছে, “হযরত আবু হােরায়রা (রা) বর্ণনা করেন, যে, রাসূলুৱাহ (সা) ।

ইরশাদ করেন, রােযা ঢাল স্বরূপ। তাই অশ্লীলতার মাধ্যমে তা নষ্ট করাে না। কেউ যদি তার সাথে ঝগড়া করে ও গালি দেয়, সে যেন বলে আমি রােযাদার’ বর্ণনা কারী বলেন আসললাহ (সা) কথাটি দুইবার বলেছেন। সেই মহান সত্বার শপথ যার হাতে আমার প্রাণ! রােযাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহ নিকট মেশকের সুগন্ধি অপেক্ষা প্রিয়। সে আমার জন্য পানাহার ও যৌনাচার পরিহার করে। রােযা আমারই জন্য রাখা হয়। তাই আমিই এর প্রতি দান দেব। প্রতিটি পূন্যের ছওয়াব দশগুণ করে দেব” (সহীহ বুখারী)। অপর এক হাদীসে এসেছে, “জান্নাতে রাইয়ান নামে একটি দরজা রয়েছে যা দিয়ে কেবল রােযাদারগণই প্রবেশ করতে পারবে।

 অন্য কেউ এটি দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। বলা হবে, রােযাদারগণ কোথায়? তখন রােযাদারগণ দাড়াবে। অন্যরা তা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। তারা প্রবেশ করার পর দরজা বন্ধ করে দেয়া হবে; আর কেউ তারেত প্রবেশ করতে পারবে না” (সহীহ বুখারী)। হযরত আবু হােরায়রা (রা) বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন, “রমযান মাস আসলে জান্নাতের দরজাগুলাে খুলে দেয়া হয়, জাহান্নামের দরজাগুলাে বন্ধ করে দেয়া হয় এবং শয়তানকে শৃঙ্খলাবদ্ধ। করা হয়। অর্থাৎ এই মাসে আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদের প্রতি বিশেষ নযর দেন।। কুমন্ত্রণাদাতা শয়তাকে আবদ্ধ রাখার কারণে বান্দাগণ সহজে আমল করতে পারে এবং জান্নতের রাস্তা তার জন্য সহজ হয়ে যায়। এজন্যই অপর হাদীসে এসেছে, সবচেয়ে হতভাগ্য ঐ ব্যক্তি যে রমযান মাস পেল অথচ নেক আমলের মাধ্যমে জান্নাতকে নিজের জন্য অবধারিত করতে পারলাে না। 


হযরত আবু হােরায়রা (রা) থেকে অপর এক বর্ণনায় এসেছে যে, রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন, “যখন রমযান মাসের প্রথম রাত আগমণ করে তখন শয়তান ও বিতাড়িত জিনদেরকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়, দোযখের দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়; যা আর। কখনাে ভােলা হয় না। জান্নাতের দরজাসমূহ খােলে দেয়া হয় যার একটিও আর কখনাে বন্ধ করা হয় না। আর একজন ঘােষক ঘােষণা করে ‘হে কল্যাণের ধারক এগিয়ে আস,। হে অকল্যাণের ধারক ক্ষান্ত হও। এদিন অনেককেই দোযখ থেকে মুক্তি দেয়া হয়। এভাবে প্রতি রাত্রেই চলতে থাকে” (জামে তিরমিযী)। 


উক্ত বর্ণনাকারী থেকে অপর একটি হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন, যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ছওয়াবের আশায় রমযান মাসের রােযা পালন করে এবং রাত জেগে তারাবীহ নামায আদায় করে তার পূর্বের সকল গােনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়” (জামে তিরমিযী)। রমযান মাস মূলত মানব জাতির হেদায়াতের ভরা মৌসুম। এমাসের প্রথম তৃতীয়াংশে রয়েছে রহমত, দ্বিতীয়াংশে আছে মাগফিরাত ও শেষাংশে রয়েছে নাজাত বা ‘ইতকুম মিনান নার- দোযখ থেকে মুক্তি। উম্মতে মুহাম্মদীর জন্য আর এক বােনাস রজনী, হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ মাস লাইলাতুল কদর' এ মাসেই রয়েছে বলে হাদীসে প্রমাণিত। কাজেই এ মাসটি জীবনের সকল গােনাহ খাতা ক্ষমা করিয়ে নিয়ে জান্নাত অর্জনের মহান সুযােগ। মহান আল্লাহ এই মুবারক মাসের রহমত, মাগফিরাত ও নাজাত আমাদের নসীব করুন। আমীন।


You may also like...

 সিয়াম পালনকারীকে আল্লাহ কী কী পুরস্কার দেবেন?

সিয়াম পালনকারীকে যেসব পুরস্কার ও প্রতিদান আল্লাহ তা‘আলা দেবেন তার অংশ বিশেষ এখানে উল্লেখ করা হল :


[১] আল্লাহ স্বয়ং নিজে সিয়ামের প্রতিদান দেবেন।

হাদীসে কুদসীতে আছে, আল্লাহ তা‘আলা বলেন :

كُلُّ عَمَلِ بَنِىْ آَدَمَ لَهُ إِلاَّ الصِّيَامَ فَإِنَّهُ لِيْ وَأَنَا أَجْزِئ بِهِ


‘‘মানুষের প্রতিটি ভাল কাজ নিজের জন্য হয়ে থাকে, কিন্তু সিয়াম শুধুমাত্র আমার জন্য, অতএব আমি নিজেই এর প্রতিদান দেব। (বুখারী : ১৯০৪)

[২] সিয়াম অতি উত্তম নেক আমল

আবূ হুরাইরাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র একটি হাদীসে তিনি বলেছিলেন :


يَا رَسُوْلَ اللهِ مُرْنِيْ بِعَمَلٍ، قَالَ عَلَيْكَ بِالصَّوْمِ فَإِنَّهُ لاَ عَدْلَ لَهُ


‘‘হে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমাকে একটি অতি উত্তম নেক আমলের নির্দেশ দিন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি সিয়াম পালন কর। কেননা এর সমমর্যাদা সম্পন্ন কোন আমল নেই।’’ (নাসাঈ : ২২২২)


অন্যান্য ইবাদত মানুষ দেখতে পায়। কিন্তু সিয়ামের মধ্যে তা নেই। লোক দেখানোর কোন আলামত সিয়াম পালনে থাকে না। শুধুই আল্লাহকে খুশী করার জন্য তা করা হয়। তাই এ ইবাদতের মধ্যে রয়েছে বিশুদ্ধ ইখলাস।


হাদীসে কুদসীতে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,


يَدَعُ شَهْوَتَهُ وَطَعَامَهُ مِنْ أَجْلِيْ


‘‘সিয়াম পালনকারী শুধুমাত্র আমাকে খুশী করার জন্যই পানাহার ও যৌন উপভোগ পরিহার করে।’ (১৮৯৪)


[৩] ক- জান্নাত লাভ সহজ হয়ে যাবে।


সহীহ ইবনু হিববান কিতাবে আছে আবূ উমামা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞাসা করলেন-


يَا رَسُوْلَ اللهِ دُلُّنِيْ عَلَى عَمَلٍ أَدْخُلُ بِهِ الْجَنَّةَ قَالَ عَلَيْكَ بِالصَّوْمِ فَإِنَّهُ لاَ مِثْلَ لَهُ


আবূ উমামা রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে এমন একটি আমল বলে দিন যার কারণে আমি জান্নাতে যেতে পারি। তিনি বললেন, তুমি সিয়াম পালন কর। কেননা এর সমমর্যাদাসম্পন্ন কোন ইবাদাত নেই। (নাসাঈ : ২২২১)


খ. সিয়াম পালনকারীকে বিনা হিসেবে প্রতিদান দেয়া হয়


অন্যান্য ইবাদতের প্রতিদান আল্লাহ তা‘আলা তার দয়ার বদৌলতে ১০ থেকে ৭০০ গুণ পর্যন্ত বাড়িয়ে দেন। কিন্তু সিয়ামের প্রতিদান ও তার সাওয়াব এর চেয়েও বেহিসেবী সংখ্যা দিয়ে গুণ দিয়ে বাড়িয়ে দেয়া হবে। হাদীসে কুদসীতে আল্লাহ বলেন,


كُلُّ عَمَلِ ابْنِ آدَمَ يُضَاعَفُ الْحَسَنَةُ بِعَشْرِ أَمْثَالِهَا إِلَى سَبْعِ مِائَةِ ضِعْفٍ قَالَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ (إِلاَّ الصَّوْمَ فَإِنَّهُ لِيْ وَأَنَا أَجْزِي بِهِ(


‘‘মানব সন্তানের প্রতিটি নেক আমলের প্রতিদান দশ থেকে সাতশত গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়ে থাকে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, কিন্তু সিয়ামের বিষয়টি ভিন্ন। কেননা সিয়াম শুধুমাত্র আমার জন্য, আমিই এর প্রতিদান দেব। (মুসলিম : ১১৫১)


অর্থাৎ কি পরিমাণ সংখ্যা দিয়ে গুণ করে এর প্রতিদান বাড়িয়ে দেয়া হবে এর কোন হিসাব নেই, শুধুমাত্র আল্লাহই জানেন সিয়ামের পুণ্যের ভান্ডার কত সুবিশাল হবে।


[৪] জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য সিয়াম ঢাল স্বরূপ


রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :


اَلصِّيَامُ جُنَّةٌ يَسْتَجِنُّ بِهَا الْعَبْدُ مِنَ النَّارِ


‘‘সিয়াম ঢাল স্বরূপ। এ দ্বারা বান্দা তার নিজেকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করতে পার।’’ (আহমাদ : ১৫২৯৯)


[৫] জাহান্নাম থেকে বাঁচার জন্য সিয়াম একটি মজবুত দূর্গ


হাদীসে আছে,


اَلصِّيَامُ جُنَّةٌ وَحِصْنُ حَصِيْنٌ مِنَ النَّارِ


‘‘সিয়াম ঢালস্বরূপ এবং জাহান্নাম থেকে বাঁচার এক মজবুত দূর্গ।’’ (আহমাদ : ৯২২৫)


[৬] আল্লাহর পথে সিয়াম পালনকারীকে আল্লাহ জাহান্নাম থেকে দূরে রাখেন।


এ বিষয়ে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :


ا- مَا مِنْ عَبْدٍ يَصُوْمُ يَوْمًا فِيْ سَبِيْلِ اللهِ إِلاَّ بَاعَدَ اللهُ بِذَلِكَ وَجْهَهُ عَنِ النَّارِ سَبْعِيْنَ خَرِيْفًا


(ক) ‘‘যে কেউ আল্লাহর রাস্তায় (অর্থাৎ শুধুমাত্র আল্লাহকে খুশী করার জন্য) একদিন সিয়াম পালন করবে, তদ্বারা আল্লাহ তাকে জাহান্নামের অগ্নি থেকে সত্তর বছরের রাস্তা পরিমাণ দূরবর্তীস্থানে রাখবেন। (বুখারী : ২৮৪০; মুসলিম : ১১৫৩)


ب-مَنْ صَامَ يَوْمًا فِيْ سَبِيْلِ اللهِ بَاعَدَ اللهُ وَجْهَهُ عَنِ النَّارِ سَبْعِيْنَ خَرِيْفًا


(খ) ‘‘যে ব্যক্তি একদিন আল্লাহর পথে সিয়াম পালন করবে আল্লাহ তার কাছ থেকে জাহান্নামকে সত্তর বছরের রাস্তা দূরে সরিয়ে নেবেন। (মুসলিম : ১১৫৩)


ج-عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ يَا رَسُولَ اللهِ مُرْنِي بِأَمْرٍ يَنْفَعُنِي اللهُ بِهِ قَالَ عَلَيْكَ بِالصِّيَامِ فَإِنَّهُ لاَ مِثْلَ لَهُ


(গ) আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, ‘‘আমি আল্লাহর রাসূলকে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে এমন একটি কাজের নির্দেশ দিন যার দ্বারা আমি লাভবান হতে পারি। তিনি বললেন, তুমি সিয়াম পালন কর। কেননা এর সমকক্ষ (মর্যাদা সম্পন্ন) কোন ইবাদত নেই। (নাসাঈ : ২২২১)


You may also like...

[৭] ইফতারের সময় বহু লোককে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে থাকেন।


হাদীসে আছে :


إِنَّ للهِ تَعَالَى عِنْدَ كُلِّ فِطْرٍ عُتَقَاءُ مِنَ النَّارِ، وَذَلِكَ كُلّ لَيْلَةٍ


ইফতারের মূহূর্তে আল্লাহ রাববুল ‘আলামীন বহু লোককে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে থাকেন। মুক্তির এ প্রক্রিয়াটি রমাযানের প্রতি রাতেই চলতে থাকে। (আহমাদ : ৫/২৫৬)


[৮] সিয়াম পালনকারীর মুখের গন্ধ আল্লাহর কাছে মিশ্কের চেয়েও উত্তম (সুগন্ধিতে পরিণত হয়)।


রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :


وَالَّذِيْ نَفْسِ مُحَمَّدٍ بِيَدِهِ لَخُلُوْفُ فَمِ الصَّائِمِ أَطْيَبُ عِنْدَ اللهِ مِنْ رِيْحِ الْمِسْكِ.


যার হাতে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র জীবন সে সত্তার শপথ করে বলছি, সিয়াম পালনকারীর মুখের গন্ধ আল্লাহ তা‘আলার কাছে মিশকের ঘ্রাণের চেয়েও প্রিয় হয়ে যায়। (বুখারী : ১৯০৪; মুসলিম : ১১৫১)


[৯] সিয়াম পালনকারীর জন্য রয়েছে দু’টি বিশেষ আনন্দ মুহূর্ত।


রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :


لِلصَّائِمِ فَرْحَتَانِ فَرْحَةٌ عِنْدَ فِطْرِهِ وَفَرْحَةٌ عِنْدَ لِقَاءِ رَبِّهِ


সিয়াম পালনকারীর জন্য দু’টো বিশেষ আনন্দ মুহূর্ত রয়েছে : একটি হল ইফতারের সময়, আর দ্বিতীয়টি হল তার রবের সাথে সাক্ষাতের সময়। (বুখারী : ৭৪৯২; মুসলিম : ১১৫১)


[১০] সিয়াম কিয়ামাতের দিন সুপারিশ করবে


হাদীসে আছে,


اَلصِّيَامُ وَالْقُرْآنُ يَشْفَعَانِ لِلْعَبْدِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ يَقُولُ الصِّيَامُ أَيْ رَبِّ مَنَعْتُهُ الطَّعَامَ وَالشَّهَوَاتِ بِالنَّهَارِ فَشَفِّعْنِي فِيهِ وَيَقُولُ الْقُرْآنُ مَنَعْتُهُ النَّوْمَ بِاللَّيْلِ فَشَفِّعْنِي فِيهِ قَالَ فَيُشَفَّعَانِ


সিয়াম ও কুরআন কিয়ামাতের দিন মানুষের জন্য এভাবে সুপারিশ করবে যে, সিয়াম বলবে হে আমার রব, আমি দিনের বেলায় তাকে (এ সিয়াম পালনকারীকে) পানাহার ও যৌনতা থেকে বিরত রেখেছি। তাই তার ব্যাপারে তুমি আমার সুপারিশ কবূল কর।


অনুরূপভাবে কুরআন বলবে, হে আমার রব, আমাকে অধ্যয়নরত থাকায় রাতের ঘুম থেকে আমি তাকে বিরত রেখেছি। তাই তার ব্যাপারে তুমি আমার সুপারিশ কবূল কর। তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, অতঃপর উভয়ের সুপারিশই কবূল করা হবে। (আহমাদ : ২/১৭৪)


[১১] সিয়াম হল গুনাহের কাফফারা


(ক) আল্লাহ তাআলা বলেন,


﴿ ... إِنَّ ٱلۡحَسَنَٰتِ يُذۡهِبۡنَ ٱلسَّيِّ‍َٔاتِۚ ١١٤ ﴾ [هود: ١١٤]


নিশ্চয়ই নেক আমল পাপরাশি দূর করে দেয়। (সূরা হুদ : ১১৪)


(খ) নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,


فِتْنَةُ الرَّجُلِ فِي أَهْلِهِ وَمَالِهِ وَوَلَدِهِ وَجَارِهِ تُكَفِّرُهَا الصَّلَاةُ وَالصَّوْمُ وَالصَّدَقَةُ (بخارى ومسلم(


পরিবার পরিজন, ধন-সম্পদ ও প্রতিবেশিদের নিয়ে জীবন চলার পথে যেসব গুনাহ মানুষের হয়ে যায় সালাত, সিয়াম ও দান খয়রাত সেসব গুনাহ মুছে ফেলে দেয়। (বুখারী : ৫২৫; মুসলিম : ১৪৪)


[১২] সিয়াম পালনকারীর এক রমযান থেকে পরবর্তী রমাযানের মধ্যবর্তী সময়ে হয়ে যাওয়া ছগীরা গুনাহগুলোকে মাফ করে দেয়া হয়।


ক- আল্লাহ তাআলা বলেন,


﴿ إِن تَجۡتَنِبُواْ كَبَآئِرَ مَا تُنۡهَوۡنَ عَنۡهُ نُكَفِّرۡ عَنكُمۡ سَيِّ‍َٔاتِكُمۡ وَنُدۡخِلۡكُم مُّدۡخَلٗا كَرِيمٗا ٣١ ﴾ [النساء: ٣١]


‘‘তোমরা যদি নিষিদ্ধ কবীরা গুনাহ থেকে বিরত থাক তাহলে তোমাদের ছগীরা গুনাহগুলোকে মুছে দেব এবং (জান্নাতে) তোমাদেরকে সম্মানজনক স্থানে প্রবেশ করাব। (সূরা নিসা : ৩১)


খ- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :


اَلصَّلَوَاتُ الْخَمْسُ وَالْجُمُعَةُ إِلَى الْجُمُعَةِ وَرَمَضَانُ إِلَى رَمَضَانَ مُكَفَّرَاتٌ لِمَا بَيْنَهُنَّ إِذَا اجْتَنِبَتِ الْكَبَائِرُ


পাঁচ ওয়াক্ত সালাত এর মধ্যবর্তী সময় ও এক জুমুআ থেকে অপর জুমুআ এবং এক রমযান থেকে অপর রমযান পর্যন্ত মধ্যবর্তী সময়ের মধ্যে হয়ে যাওয়া ছগীরা গুনাহগুলোকে (উল্লেখিত ইবাদতের) কাফ্ফারাস্বরূপ মুছে দেয়া হয় সে যদি কবীরা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকে। (মুসলিম : ২৩৩)


[১৩] সিয়াম পালনকারীর পূর্বেকার গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়।


নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,


مَنْ صَامَ رَمَضَانَ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ


যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সাওয়াব হাসিলের আশায় রমযানে সিয়াম পালন করবে, তার অতীতের সব গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে। (বুখারী : ৩৮; মুসলিম : ৭৬৯)


[১৪] সিয়াম যৌনপ্রবৃত্তি নিয়ন্ত্রণে রাখে


রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,


يَا مَعْشَرَ الشَّبَابِ مَنْ اسْتَطَاعَ مِنْكُمْ الْبَاءَةَ فَلْيَتَزَوَّجْ فَإِنَّهُ أَغَضُّ لِلْبَصَرِ وَأَحْصَنُ لِلْفَرْجِ وَمَنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَعَلَيْهِ بِالصَّوْمِ فَإِنَّهُ لَهُ وِجَاءٌ


হে যুবকেরা! তোমাদের মধ্যে যে সামর্থ রাখে সে যেন বিবাহ করে। কেননা বিবাহ দৃষ্টি ও লজ্জাস্থানের হেফাযতকারী। আর যে ব্যক্তি বিবাহের সামর্থ রাখেনা সে যেন সিয়াম পালন করে। কারণ এটা তার জন্য নিবৃতকারী। (অর্থাৎ সিয়াম পালন যৌন প্রবৃত্তি নিবৃত করে রাখে) (বুখারী : ১৯০৫; মুসলিম : ১৪০০)


[১৫] সিয়াম পালনকারীরা রাইয়ান নামক মহিমান্বিত এক দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবে।


إِنَّ فِي الْجَنَّةِ بَابًا يُقَالُ لَهُ الرَّيَّانُ يَدْخُلُ مِنْهُ الصَّائِمُونَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ لاَ يَدْخُلُ مِنْهُ أَحَدٌ غَيْرُهُمْ يُقَالُ أَيْنَ الصَّائِمُونَ فَيَقُومُونَ لاَ يَدْخُلُ مِنْهُ أَحَدٌ غَيْرُهُمْ فَإِذَا دَخَلُوا أُغْلِقَ فَلَمْ يَدْخُلْ مِنْهُ أَحَدٌ


জান্নাতে একটি দরজা রয়েছে। যার নাম রাইয়্যান। কিয়ামতের দিন শুধু সিয়ামপালনকারীরা ঐ দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে। তাদের ছাড়া অন্য কেউ সেই দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। সেদিন ঘোষণা করা হবে, সিয়াম পালনকারীরা কোথায়? তখন তারা দাঁড়িয়ে যাবে ঐ দরজা দিয়ে প্রবেশ করার জন্য। তারা প্রবেশ করার পর ঐ দরজাটি বন্ধ করে দেয়া হবে। ফলে তারা ব্যতীত অন্য কেউ আর সেই দরজা দিয়ে জান্নাতে ঢুকতে পারবেনা। (বুখারী : ১৮৯৬; মুসলিম : ১১৫২)। 

Next Post Previous Post