দোয়া কবুল হওয়ার কিছু নিয়ম । দোয়া করার সময় যে বিষয়গুলি স্মরণ রাখা উচিত
প্রার্থনা এবং প্রার্থনার মাধ্যমে একজন তার বিশেষ ভুলের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চান এবং প্রতিদিনের জীবনে পণ্যের জন্য তার প্রভুর কাছে প্রার্থনা করেন। প্রার্থনা বা মোনাজাতের জন্য কিছু নিয়ম রয়েছে যা পালন করা হলে প্রভুর কাছে আরও সম্মানজনক। নিচে আমি কোরআন ও হাদিসের আলোকে দোয়া বা মোনাজাতের কিছু বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করেছি।
 |
দোয়া কবুল হওয়ার কিছু নিয়ম |
১- দুআ করার সময় তা কবুল হওয়ার ব্যাপারে এ দৃঢ় বিশ্বাস রাখা এবং দৃঢ়তার সঙ্গে দুআ করা
যদি আল্লাহ সম্পর্কে যথার্থ জ্ঞান থাকে তাঁর কুদরত, মহত্ত্ব, ওয়াদা পালনের প্রতি ঈমান থাকে তাহলে এ বিষয়টা আয়ত্ব করা সহজ হবে। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন
لا يقل أحدكم : اللهم اغفر لي إن شئت، وارحمني إن شئت، وارزقني إن شئت، وليعزم مسألته إنه يفعل ما يشاء ، لا مكره
له . (رواه البخاري 7477)
তোমাদের কেউ এ রকম বলবে না :
হে আল্লাহ আপনি যদি চান তাহলে আমাকে ক্ষমা করে দিন। যদি আপনি চান তাহলে আমাকে অনুগ্রহ করুন। যদি আপনি চান তাহলে আমাকে জীবিকা দান করুন। বরং দৃঢ়তার সঙ্গে প্রার্থনা করবে এবং মনে রাখবে তিনি যা চান তা-ই করেন, তাকে কেউ বাধ্য করতে পারে না। (বুখারী)
অর্থাৎ আল্লাহ যা ইচ্ছে করেন তা-ই করে থাকেন। তাই এভাবে প্রার্থনা বা মুনাজাত করার কোনো সার্থকতা নেই যে, আপনি চাইলে করেন। ঠিক এমনিভাবে তার কাছে দৃঢ়তার সঙ্গে প্রার্থনা করলে তাকে বাধ্য করা হয় না। কেননা তাকে কেউ বাধ্য করতে পারে না। এটা প্রার্থনাকারীসহ সকলে জানে।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেন :
ادعوا الله وأنتم موقنون بالإجابة، واعلموا أن الله لا يستجيب من قلب غافل لاه. (رواه الترمذي والحاكم وصححه الألباني
প্রার্থনা কবুল হবে এ দৃঢ় বিশ্বাস রেখে তোমরা প্রার্থনা করবে। এবং জেনে রাখ আল্লাহ কোনো উদাসীন অন্তরের প্রার্থনা কবুল করেন না। (তিরমিজী, হাকেম)
 |
দোয়া কবুল হওয়ার কিছু নিয়ম |
২-বিনয় ও একাগ্রতার সঙ্গে দুআ করা এবং আল্লাহর অনুগ্রহ লাভ ও তার শাস্তি থেকে বাঁচার প্রবল আগ্রহ নিয়ে দুআ করা :
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন :
ادْعُوا رَبَّكُمْ تَضَرُّعًا وَخُفْيَةً (الأعراف : 55)
তোমরা বিনীতভাবে ও গোপনে তোমাদের প্রতিপালকের কাছে দুআ করবে। (আল-আরাফ : ৫৫)
আল্লাহ তাআলা বলেন :
إِنَّهُمْ كَانُوا يُسَارِعُونَ فِي الْخَيْرَاتِ وَيَدْعُونَنَا رَغَبًا وَرَهَبًا (الأنبياء : 90)
তারা সৎকর্মে প্রতিযোগিতা করে ও তারা আমার কাছে প্রার্থনা করে আশা ও ভীতির সঙ্গে এবং তারা থাকে আমার নিকট বিনীত। (Avj - Avw¤^qv : ৯০)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুআর সময় বিনয়, ভীতি ও আশা নিয়ে কিভাবে দুআ করতেন তার একটি ছোট দৃষ্টান্ত এ হাদীসে দেখা যায়
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুআর সময় বিনয়, ভীতি ও আশা নিয়ে কিভাবে দুআ করতেন তার একটি ছোট দৃষ্টান্ত এ হাদীসে দেখা যায় :\
عن عبد الله بن عمرو بن العاص رضي الله عنهما أن النبي صلى الله عليه وسلم تلا قول الله عز وجل عن إبراهيم عليه السلام : (رب إنـهـن أضللن كثيرا من الناس فمن تبعني فإنه مني ) وقول عيسى علي السلام (إن تعذبهم فإنهم عبادك وإن تغفر لهم فإنك أنت العزيز الحكيم) فرفع يديه وقال : اللهم أمتي أمتي وبكى، فقال الله عز وجل : يا جبريل اذهب إلى محمد –وربك أعلم – فسله ما يبكيه. فأتاه جبريل فأخبره رسول الله صلى الله عليه وسلم بما قال وهو أعلم، فقال الله تعالى : يا جبريل اذهب إلى محمد فقل : إنا سنرضيك في أمتك ولا نسوؤك . (رواه مسلم 202(
আবদুল্লাহ ইবনে আমর রা. এটি তেলাওয়াত করা হয়েছে যে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন যে তিনি তাঁর প্রার্থনা সম্পর্কে কুরআনের এই আয়াতটি পাঠ করেছিলেন, হে আমার রব! এই সমস্ত আইকনগুলি অসংখ্য লোককে বিভ্রান্ত করেছে। সুতরাং যে আমাকে অনুসরণ করে সে আমারই।'তিনি এর দুআ সম্পর্কে কুরআনের এই আয়াতটিও তেলাওয়াত করেছিলেন, 'আপনি যদি তাদের শাসন করেন তবে তারা আপনার রক্ষাকারী এবং যদি আপনি তাদের ক্ষমা করেন তবে আপনি ক্ষমতাবান, প্রজ্ঞাময়।
তিনি দুই হাত তুলে বললেন, হে আল্লাহ! আমার উম্মত! আমার উম্মত!!’ এবং তিনি কাঁদলেন। আল্লাহ বললেন, হে জিব্রাইল! তুমি মুহাম্মদের কাছে যাও, তাকে জিজ্ঞেস করো-অবশ্যই তুমি প্রভুকে ভালো করেই জানো- কী কারণে তাকে কাঁদিয়েছিল। জিব্রাইল এলেন। আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, "আল্লাহই ভাল জানেন।" তিনি বললেন, "হে জিব্রাইল, মুহাম্মদের কাছে যাও এবং বল, 'আমি অবশ্যই তাকে তার উম্মতের সাথে সন্তুষ্ট করব, এবং আমি এটার জন্য তাকে অসভ্যতা করবে না।' (মুসলিম)
 |
দোয়া কবুল হওয়ার কিছু নিয়ম |
৩-আল্লাহর কাছে অত্যন্ত বিনীতভাবে ধর্না দেয়া এবং নিজের দুর্বলতা, অসহায়ত্ব ও বিপদের কথা আল্লাহর কাছে প্রকাশ করা
দেখুন . কিভাবেআইউব আ আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেছেন। আল্লাহ সে সম্পর্কে বলেন:
وَأَيُّوبَ إِذْ نَادَى رَبَّهُ أَنِّي مَسَّنِيَ الضُّرُّ وَأَنْتَ أَرْحَمُ الرَّاحِمِينَ . الأنبياء : 83(
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যাকারিয়া আ. এর প্রার্থনা সম্পর্কে বলেন :
قَالَ رَبِّ إِنِّي وَهَنَ الْعَظْمُ مِنِّي وَاشْتَعَلَ الرَّأْسُ شَيْبًا وَلَمْ أَكُنْ بِدُعَائِكَ رَبِّ شَقِيًّا ﴿4﴾ وَإِنِّي خِفْتُ الْمَوَالِيَ مِنْ وَرَائِي وَكَانَتِ امْرَأَتِي عَاقِرًا فَهَبْ لِي مِنْ لَدُنْكَ وَلِيًّا ﴿5﴾ مريم :5-4
সে বলেছিল, হে আমার প্রভু! আমার অস্থি দুর্বল হয়েছে, বার্ধক্যে আমার মস্তক সাদা হয়ে গেছে। হে আমার প্রতিপালক! তোমার কাছে প্রার্থনা করে আমি কখনো ব্যর্থকাম হইনি। আমি আশংকা করি আমার পর আমার সগোত্রীয়দের সম্পর্কে ; আমার স্ত্রী বন্ধ্যা। সুতরাং তুমি তোমার নিকট হতে দান কর উত্তরাধিকার। (মারইয়াম : ৪-৫)
ইবরাহীম আ. এর দুআ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন :
رَبَّنَا إِنِّي أَسْكَنْتُ مِنْ ذُرِّيَّتِي بِوَادٍ غَيْرِ ذِي زَرْعٍ عِنْدَ بَيْتِكَ الْمُحَرَّمِ رَبَّنَا لِيُقِيمُوا الصَّلَاةَ فَاجْعَلْ أَفْئِدَةً مِنَ النَّاسِ تَهْوِي إِلَيْهِمْ وَارْزُقْهُمْ مِنَ الثَّمَرَاتِ لَعَلَّهُمْ يَشْكُرُونَ. (إبراهيم : 37)
হে আমাদের রব, নিশ্চয় আমি আমার কিছু বংশধরদেরকে ফসলহীন উপত্যকায় তোমার পবিত্র ঘরের নিকট বসতি স্থাপন করালাম, হে আমাদের রব, যাতে তারা সালাত কায়েম করে। সুতরাং কিছু মানুষের হৃদয় আপনি তাদের দিকে ঝুঁকিয়ে দিন এবং তাদেরকে রিয্ক প্রদান করুন ফল-ফলাদি থেকে, আশা করা যায় তারা শুকরিয়া আদায় করবে।’ (ইবরাহীম : ৩৭)
কুরআন কারীমে এ ধরনের বহু আয়াত আছে যাতে তুলে ধরা হয়েছে . আলাইহিমু চ্ছালাম কিভাবে কাতরতা ও বিনয়ের সঙ্গে নিজেদের করুণ অবস্থা আল্লাহর কাছে তুলে ধরেছেন। মুমিনদের কর্তব্য ঠিক এমনিভাবে আল্লাহর কাছে দুআ ও প্রার্থনা করা।
- বিপদ থেকে মুক্তি: যেকোনো কঠিন সময়ে এই দোয়া বিশেষ সহায়ক।
- মানসিক শান্তি: এটি পাঠ করলে অন্তরে শান্তি ও স্থিরতা আসে।
- ক্ষমা প্রাপ্তি: দোয়া কুনুত আমাদের পাপ মোচনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।