প্রতিদিন সকালে এক কোয়া রসুন খাওয়ার ১০ উপকারিতা
প্রতিদিন সকালে এক কোয়া রসুন খাওয়ার ১০ উপকারিতা
প্রতিদিন সকালে এক কোয়া রসুন খাওয়ার ১০ উপকারিতা |
রসুন আমাদের দৈনন্দিন খাবারের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। যা রসুন পুষ্টিগুণে ভরপুর এবং প্রতি দিনের খাবারে ব্যবহৃত হয়। তরকারিতে ব্যবহারের পাশাপাশি রসুন ভর্তা কিংবা রসুনের কোয়া কাঁচা খাওয়া যায়। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এক কোয়া রসুন খেলে স্বাস্থ্যের অনেক উপকার পাওয়া যায়। কেন আপনার দৈনন্দিন রুটিনে রসুন রাখবেন, জেনে নিন তার ১০ কারণ।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
রসুনে রয়েছে অ্যালিসিন নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। বিভিন্ন রোগের সংক্রমণ এবং অসুস্থতার বিরুদ্ধে এটি লড়াই করে যায়। নিয়মিত রসুন খেলে সাধারণ সর্দি ও অন্যান্য সংক্রমিত রোগের তীব্রতা কমতে পারে।
রক্ত চাপ কমায়
রসুনের অ্যালিসিন রক্তনালীগুলো শিথিল করতে এবং রক্ত প্রবাহকে বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। রসুন খেলে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রিত হয়। এটি কার্ডিওভাসকুলার রোগের ঝুঁকিও কমাতে সাহায্য করে।
কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ
রসুন খেলে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে যায় এবং ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা কিছুটা বাড়িয়ে দেয়।
ভাল কোলেস্টেরলের ভারসাম্যতা হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমিয়ে দেয়। রসুনে থাকা অ্যালিসিন ছত্রাকজনিত সংক্রমণের সম্ভাবনা একেবারেই কমিয়ে দেয়। গাঁটে ব্যথা বা আর্থ্রাইটিস থেকে স্থায়ী মুক্তি পাওয়া যায় রসুন খেলে।
ক্ষতিকর পদার্থ বের করে
রসুন ডিটক্সিফিকেশনের জন্য দায়ী লিভারের এনজাইমগুলোকে বাড়িয়ে দেয়। রসুনে থাকা সালফার যৌগ শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করতে সাহায্য করে।
উন্নত ডিটক্সিফিকেশন প্রক্রিয়া শরীরের দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি কমিয়ে আনতে পারে।
হজমে সহায়তা
হজমের কার্যকারিতা বজায় রাখতে সাহায্য করে রসুন। পুরনো রসুনের নির্যাস গ্যাস্ট্রিক নিরাময়ে সাহায্য করে। এর অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্যগুলো অন্ত্রের বিভিন্ন ধরনের পরজীবী ও মাইক্রোবিয়াল সংক্রমণকে মেরে ফেলে। নিয়মিত সেবনে পেট ফোলাভাব, কোলাইটিস, আলসার, গ্যাস ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়।
জ্বালাপোড়া দূর করে
রসুনে সালফার যৌগগুলোর শক্তিশালী অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি প্রভাব রয়েছে। এর ফলে শরীরে জ্বালাপোড়া কমে যায়। এছাড়া অন্যান্য প্রদাহজনিত রোগ থেকেও মুক্তি পাওয়া যেতে পারে।
হাড়ের ক্ষয় রোধ
রসুনে রয়েছে ভিটামিন সি, ভিটামিন বি৬ ও ম্যাঙ্গানিজের মতো পুষ্টি উপাদান। এটি হাড়কে শক্তিশালী ও সুস্থ রাখার জন্য অপরিহার্য। নিয়মিত সেবনে অস্টিওপরোসিস প্রতিরোধ করা যায়। এছাড়া হাড়ের ক্ষয়রোধ ও ঘনত্ব বাড়াতেও সাহায্য করে।
ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি
রসুনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্যগুলো ব্রণ কমাতে এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে সাহায্য করে। এটি খাওয়া যাবে এবং ত্বকে লাগালেও উপকার পাওয়া যেতে পারে।
কর্মক্ষমতা বাড়ায়
রসুন নাইট্রিক অক্সাইড উৎপাদন বাড়াতে সাহায্য করে। রক্ত প্রবাহ বৃদ্ধি করে। পেশীতে অক্সিজেন সরবরাহ করে। এছাড়া শারীরিক কর্মক্ষমতা বাড়ায় এবং ব্যায়ামের সময় ক্লান্তি দূর করতে সাহায্য করে।
কিডনি রোগে সহায়ক
রসুনে থাকা অ্যালিসিন নামের যৌগ কিডনির শিথিলতা, রক্তচাপ ও মানসিক চাপ দূর করতে সাহায্য করে। এটিতে অ্যান্টিহাইপারটেনসিভ, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও নেফ্রোপ্রোটেক্টিভ প্রভাব রয়েছে।
কাঁচা রসুনের অপকারিতা:
শরীরের অনেক সমস্যার জন্যই রসুন খুব উপকারি। তবে সবার শরীরের জন্যই যে ভালো ফল নিয়ে আসবে তা কিন্তু নয়। রসুনের কিছু কিছু গুণের জন্য অনেক শারীরিক সমস্যা বেড়েও যেতে পারে।
১. গবেষণায় জানা যায় যে, মাত্রাতিরিক্ত রসুন খাওয়ার ফলে রসুনে থাকা রাসায়নিক উপাদান অ্যালিসিন লিভারে বিষক্রিয়া তৈরি করতে পারে।
২. রসুনে রয়েছে সালফার, যা পেটে গ্যাস তৈরি করে। তাই খালি পেটে রসুন খেলে ডায়রিয়া হতে পারে।
৩. রক্তের ঘনত্ব কমায় রসুন। তাই যারা ওয়ারফারিন, অ্যাসপিরিন ইত্যাদি ওষুধ সেবন করেন; তাদের অতিরিক্ত রসুন খাওয়া উচিত নয়। এতে রক্ত অতিরিক্ত পাতলা হতে পারে।
৪. রক্তচাপ কমে যেতে পারে অতিরিক্ত রসুন খেলে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, দীর্ঘদিন রসুন খেলে ঘাম বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
৫. গর্ভবতী নারী রসুন খেলে প্রসব বেদনা বেড়ে রক্তক্ষরণ হতে পারে। এ ছাড়াও শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানো মায়েরাও রসুন খাবেন না। এতে দুধের স্বাদ পাল্টে যেতে পারে।
৬. অতিরিক্ত রসুন খেলে মুখে দুর্গন্ধ হয়। আর এই দুর্গন্ধের প্রধান কারণ হল রসুনে থাকা উপাদান সালফার।
৭. অতিরিক্ত রসুন খাওয়ার কারণে ‘হাইফিমা’ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। অর্থাৎ ‘আইরিস’ ও ‘কর্নিয়া’র মাঝে রক্তক্ষরণ ঘটাতে পারে। ফলাফল হারাতে পারে দৃষ্টিশক্তি।
রসুনকে বলা হয় প্রাকৃতিক অ্যান্টিবায়োটিক। অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরা এই উপকারী ভেষজ আমাদের শরীর সুস্থ রাখার ক্ষেত্রে বেশ কার্যকরী। আপনি যদি খালি পেটে কাঁচা রসুন খাওয়ার অভ্যাস করেন তবে তা আপনার শরীরকে ডিটক্সিফাই করতে সাহায্য করবে। সকালে ঘুম থেকে ওঠার পরে আমাদের মেটাবলিক রেট একটু বেশি থাকে। তাই খালি পেটে কাঁচা রসুন খেলে উপকার মিলবে বেশি।
People also ask:
সকাল বেলা খালি পেটে রসুন খেলে কি হয়?
প্রতিদিন সকালে এক কোয়া রসুন খেলে কি হয়?
রসুন কোন সময় খাওয়া উচিত?
সাধারণত রান্নার সময় খাবারে রসুন যোগ করা হয়। এইভাবে রসুনের স্বাদ খাবারে মিশে যায় এবং এর উপকারিতাও পাওয়া যায়। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, খালি পেটে রসুন খেলে এর উপকারিতা আরও বেশি পাওয়া যায়। তবে, খালি পেটে রসুন খেলে কিছু লোকের পেটে অস্বস্তি হতে পারে। তাই, খালি পেটে রসুন খাওয়ার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। রাতে ঘুমের আগে এক কোয়া রসুন খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
গরম জলে রসুন খেলে কি হয়?