জাল টাকা চেনার উপায়: সহজ এবং কার্যকর পদ্ধতি

 

জাল টাকা চেনার উপায়: সহজ এবং কার্যকর পদ্ধতি

জাল টাকা চেনার উপায়: সহজ এবং কার্যকর পদ্ধতি



জাল টাকা আমাদের অর্থনীতিতে বড় ধরনের সমস্যা সৃষ্টি করে। এটি কেবল অর্থনৈতিক ক্ষতি নয়, বরং সাধারণ মানুষের জন্য ঝুঁকিপূর্ণও। তাই, আমাদের সবারই জাল টাকা চেনার কিছু কার্যকর পদ্ধতি জানা জরুরি। বাংলাদেশে বেশ কিছু সহজ পদ্ধতি রয়েছে, যা মেনে আপনি আসল এবং জাল টাকার মধ্যে পার্থক্য বুঝতে পারবেন। এই নিবন্ধে আমরা বিভিন্ন উপায় নিয়ে আলোচনা করব, যাতে আপনি সহজেই জাল টাকা শনাক্ত করতে পারেন।

১. পানি চিহ্ন বা ওয়াটারমার্ক দেখে চেনা

আসল টাকার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো এর পানি চিহ্ন বা ওয়াটারমার্ক। পানি চিহ্নটি মূলত টাকার ওপরেই খোদাই করা থাকে, যা আলোতে ধরলে সহজেই বোঝা যায়।

কিভাবে চিনবেন:

টাকা আলোতে ধরলে আপনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি দেখতে পাবেন।


জাল টাকায় সাধারণত এই ছবি ধোঁয়াশা বা অস্পষ্ট থাকে।


২. নিরাপত্তা সুতা (সিকিউরিটি থ্রেড) পরীক্ষা করা

আসল টাকায় এক ধরনের বিশেষ সিকিউরিটি থ্রেড বা নিরাপত্তা সুতা থাকে, যা টাকার মাঝখানে উল্লম্বভাবে অবস্থান করে।

কিভাবে চিনবেন:

এই সুতাটি একপাশ থেকে অন্যপাশে টানা থাকে এবং এটি আলোর সামনে ধরলে পরিষ্কার দেখা যায়।


১০০০ এবং ৫০০ টাকার নোটে এই সিকিউরিটি সুতায় "বাংলাদেশ ব্যাংক" এবং টাকার মান লেখা থাকে।


জাল টাকায় এই সুতাটি সাধারণত নিখুঁত হয় না এবং তাতে লেখা অস্পষ্ট বা গায়েব থাকে।


৩. টাকার রং পরীক্ষা করা

আসল টাকার রং একটু গভীর ও উজ্জ্বল হয়, যা দেখতে সুন্দর এবং সহজেই চোখে পড়ে। জাল টাকায় সাধারণত রঙে ত্রুটি থাকে।

কিভাবে চিনবেন:

টাকার উপর থাকা সবুজ এবং গোলাপি রংগুলো আলাদাভাবে পরিষ্কার বুঝতে পারবেন।


জাল টাকায় এই রঙগুলো ফ্যাকাশে বা ধোঁয়াশা থাকে, যা প্রথম দেখাতেই অস্বাভাবিক মনে হয়।


৪. মাইক্রোপ্রিন্টিং দেখে বোঝা

আসল টাকায় কিছু মাইক্রোপ্রিন্টিং করা থাকে, যা খালি চোখে দেখলে বোঝা যায় না।

কিভাবে চিনবেন:

আপনি ম্যাগনিফাইং গ্লাস ব্যবহার করে "বাংলাদেশ ব্যাংক" বা "BDT" লেখা দেখতে পারবেন।


জাল টাকায় এই মাইক্রোপ্রিন্টিং সাধারণত থাকে না বা খুবই অস্বচ্ছ থাকে।


৫. অপটিক্যাল ভ্যারিয়েবল ইঙ্ক (ওভিআই) পরীক্ষা

বেশ কিছু উচ্চ মূল্যের নোটে অপটিক্যাল ভ্যারিয়েবল ইঙ্ক ব্যবহার করা হয়, যা নোটটিকে ভিন্ন ভিন্ন রঙে প্রদর্শন করে।

কিভাবে চিনবেন:

৫০০ ও ১০০০ টাকার নোটে উপর থেকে নিচে বা একপাশ থেকে অন্যপাশে তাকালে রঙের পরিবর্তন দেখতে পাবেন।


জাল টাকায় সাধারণত এই ধরণের ইঙ্ক ব্যবহার করা হয় না, তাই এর রং স্থির থাকে।


৬. ব্রেইলে ছাপানো অক্ষর

বাংলাদেশ ব্যাংক নির্ধারিত কিছু উচ্চমূল্যের টাকায় ব্রেইলে লেখা সংখ্যা থাকে, যা অন্ধ ব্যক্তিরা স্পর্শের মাধ্যমে চিনতে পারেন।

কিভাবে চিনবেন:

আসল টাকায় হাত বুলালে একটু খসখসে অনুভূত হবে এবং এতে টাকার মূল্য লেখা থাকে।


জাল টাকায় এই ব্রেইল সংখ্যা থাকে না বা স্পর্শে সহজেই ধরা যায় না।


৭. ইউভি লাইট ব্যবহার

আসল টাকা আল্ট্রাভায়োলেট (UV) লাইটে আলাদা রংয়ে প্রদর্শিত হয়। বিশেষ করে, কিছু নিরাপত্তা চিহ্ন UV আলোতে দেখা যায়।

কিভাবে চিনবেন:

UV আলো ব্যবহার করলে আসল টাকায় নির্দিষ্ট কিছু চিহ্ন আলোকিত হয়।


জাল টাকায় এই চিহ্নগুলো অনুপস্থিত বা ভিন্নভাবে থাকে।


৮. টেক্সচার পরীক্ষা করা

আসল টাকার কাগজের টেক্সচার বা স্পর্শ অনুভূতি একটু ভিন্ন হয়ে থাকে। এটি সাধারণ কাগজ থেকে মোটা এবং স্থায়ী হয়।

কিভাবে চিনবেন:

হাত দিয়ে স্পর্শ করলে আসল টাকায় একটু মোটা এবং খসখসে অনুভূতি পাওয়া যায়।


জাল টাকায় সাধারণত কাগজটি পাতলা এবং স্পর্শে মসৃণ হয়।


জাল টাকা চেনার কিছু সাধারণ সতর্কতা

জাল টাকা থেকে নিজেকে রক্ষা করতে কিছু সাধারণ সতর্কতা অবলম্বন করতে পারেন:

অফিসিয়াল উৎস থেকে টাকা গ্রহণ করুন: ব্যাংক বা নির্ধারিত এটিএম মেশিন থেকে টাকা নেওয়ার চেষ্টা করুন।


বিশেষ করে বড় নোটগুলো পরীক্ষা করুন: ৫০০ এবং ১০০০ টাকার নোট জাল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে, তাই এই নোটগুলো বেশি সতর্ক হয়ে পরীক্ষা করুন।


টাকা গ্রহণের সময় সতর্ক থাকুন: বড় অঙ্কের টাকা লেনদেনের সময় আপনি টাকাগুলোর বৈশিষ্ট্যগুলো দেখে নিন।


কোন সন্দেহ হলে ব্যাংকে জানাতে পারেন: সন্দেহজনক টাকা পেলে তৎক্ষণাৎ নিকটস্থ ব্যাংকে যোগাযোগ করুন।


উপসংহার

জাল টাকা শনাক্ত করা আমাদের সবার দায়িত্ব এবং এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই লেখায় বর্ণিত উপায়গুলো মেনে চললে আপনি সহজেই জাল টাকা থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারবেন। বিশেষ করে যখন বড় অঙ্কের টাকা গ্রহণ করবেন, তখন এসব বৈশিষ্ট্য খেয়াল রাখুন।
তাহলে, উপরের পদ্ধতিগুলো আপনাকে জাল টাকা চেনার ক্ষেত্রে কার্যকর সহযোগিতা করবে এবং আপনি সহজেই আসল এবং জাল টাকার মধ্যে পার্থক্য বুঝতে পারবেন।

Next Post Previous Post